হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হ্যালো বন্ধুরা, আজ আমরা আপনাদের সাথে আলোচনা করব হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। প্রাচীনকাল থেকে হলুদের গুরুত্ব অপরিসীম। এটিকে মিরাকল হার্ব বা অলৌকিক ভেষজ ও বলা হয়ে থাকে অনেক সময়। 

হলুদের-উপকারিতা-ও-খাওয়ার-নিয়ম

এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারবো হলুদের বিভিন্ন গুনাগুন ও কি কি ভাবে হলুদ আমরা খেতে পারবো। তাই দেরি না করে মনোযোগ দিয়ে পুরো পোস্টটি পড়ুন।

পোস্ট সূচিপত্রঃ হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম আমাদের সকলেরই জানা প্রয়োজন কারণ এটি আমাদের শরীরকে অনেক দিক থেকে রক্ষা করে। সুতরাং হলুদের অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি যেমন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, সাথে সাথে হজম শক্তি বাড়ায় ও প্রদাহ কমায়। এটি ত্বকে ব্যবহারের ফলে ত্বক মসৃন হয় ও প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বলতা বাড়ে। এটি স্মৃতিশক্তি বাড়াতেও সাহায্য করে। সাকলে খালি পেটে হলুদ খেলে রক্ত পরিষ্কার হয়। 


হলুদে থাকা কারকিউমিন শরীরকে রোগমুক্ত রাখে এছাড়াও এটি শরীরের ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। হলুদ খাবার কিছু নিয়ম রয়েছে। একসাথে অনকেগুলো হলুদ খেলে কাজে দিবে এমনটা নয়। প্রতিদিন ১-২ গ্রাম কাঁচা হলুদ অল্প গুড় বা মধুর সাথে পানিতে মিশিয়ে খেতে হবে অথবা রাতে দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে খেতে হবে। এছাড়াও এই হলুদ আমাদের সকলের কাছেই এটি একটি পরিচিত মসলা যা ছাড়া রান্না অসুম্পূর্ণ মনে হয়। হলুদ যে শুধু রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয় এমনটা নয়, হলুদের প্যাকও ত্বকে ব্যবহার করা হয় যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।

কাঁচা হলুদের গুনাগুন 

কাঁচা হলুদের অনেক গুন রয়েছে। কাঁচা হলুদে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-৬, ভিটামিন সি, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার।  এ ছাড়াও রয়েছে কারকিউমিন যা বিভিন্ন রোগ থেকে আমাদের রক্ষা করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখে যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। হলুদ শরীরের হজমশক্তি বাড়িয়ে দেয় ফলে খাবার সহজেই পরিপাক হয়ে যায়। হলুদে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে তাই শরীরে আয়রনের ঘাটতি থাকলে এটি আয়রনের ঘাটতি দূর করতে সাহায্য করে। 

হলুদ দিয়ে তৈরী চা খেলে তা ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। কাঁচা হলুদ আলসারেটিভ কোলাইটিস যা পাচনতন্ত্রের নিচের অংশে আলসার সৃষ্টি করে, এই রোগ সৃস্টিতে বাধা দিয়ে থাকে। এটি কারকিউমিন এলডিএল ও টোটাল কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়, যার ফলে শরীরে হৃদরোগের ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়। 

কাঁচা হলুদের উপকারিতা

খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করেঃ গ্যাস্ট্রো প্রটেক্টিভ গুণাগুণ থাকে হলুদের মধ্যে যা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। এর ফলে হজমের সমস্যা ও গ্যাসের সমস্যা দূর হয়। 

হাড়ের ক্ষয় রোধ করেঃ হলুদে থাকা কারকিউমিন হাড়ের ক্ষয় রোধ করে ও হাড়কে করে তোলে সুস্থ ও মজবুত। মেনোপজের সময় মেয়েদের হাড়ের ক্ষয় থেকে রক্ষা করে। 

ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে খাদ্যনালীকে বাঁচায়ঃ হলুদে থাকা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট উপাদান ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ থেকে খাদ্যনালীকে বাঁচায়। আমাদের রোজদিনের খাবারের মধ্যে বিভিন্ন ক্ষতিকারক জীবাণু থাকতে পারে যা থেকে বিভিন্ন রোগ সৃস্টি হতে পারে। খাবারে হলুদ ব্যবহার করলে তা ক্ষতিকারক জীবাণু থেকে খাদ্যনালীকে রক্ষা করবে। 

হলুদের-উপকারিতা-ও-খাওয়ার-নিয়ম

ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করেঃ প্রাচীনকাল থেকেই এটি ত্বকের উজ্জ্বলতা রক্ষা করতে ও ত্বক মসৃণ করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বিভিন্ন ক্রিমের উপাদান হিসাবে হলুদ ব্যবহার হয়ে থাকে। কাঁচা হলুদের তৈরী পেস্ট বাসায় তৈরী করে মুখে লাগালে তা সানটান, ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করে। এটি নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকে বয়সের ছাপ পড়ে না। 

দাঁতের ক্ষয় রোধে সাহায্য করেঃ এটি দাঁতের ওপরে থাকা এনামেলের আস্তরণকে রক্ষা করে ফলে দাঁতের ক্ষয় রোধ পায়। বিভিন্ন টুথপেষ্টে এন্টিব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট হিসাবে হলুদ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এটি নিয়মিত খেলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায় ও মুখের ভেতরে ক্ষত থাকলে তা দ্রুত সেরে যায়। 

ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করেঃ হলুদে থাকা কারকিউমিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বোধ করে তাদের মৃত্যু ঘটায় ফলে ক্যান্সার এর সম্ভাবনা কমে যায়। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে ৫৬ রকমের ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায়। 

সর্দিকাশি কমাতে সাহায্য করেঃ হলুদে থাকা বিভিন্ন উপাদান যেমন কারকিউমিন, ভিটামিন সি সর্দিকাশি কমাতে সাহায্য করে। এটি শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়। 

পেট ব্যথা কমায়ঃ হলুদের আন্টিইনফ্লামেটরি গুণ পেট ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। 

হেপাটাইটিসে যকৃতের প্রদাহ কমায়ঃ আমরা জানি হেপাটাইটিস হলে যকৃতের প্রদাহ হয়। কোনো ব্যক্তির হেপাটাইটিস হলে আর হলুদ খেলে হলুদে থাকা অ্যান্টিইনফ্লামেটরি ও এন্টি ভাইরাল গুন যকৃতের প্রদাহ থেকে ওই ব্যক্তিকে রক্ষা করে। নিয়মিত কাঁচা হলুদ খেলে এটি হেপাটাইটিস ভাইরাস থেকেও আমাদের রক্ষা করবে। 

মূত্রনালির প্রদাহে সাহায্য করেঃ হলুদে থাকা উপাদান কারকিউমিন মূত্রনালির প্রদাহ থেকে রক্ষা করে। এর এন্টিব্যাকটেরিয়াল গুণ  যা মূত্রনালীকে জীবণু থেকে বাঁচায়। 

স্মৃতিশক্তি বাড়ায়ঃ মস্তিষ্কের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে ও বয়সজনিত সমস্যা থেকে মস্তিস্ককে বাঁচায়। এর ফলে স্মৃতিশক্তি বেড়ে যায়। 

অগ্ন্যাশয়কে সুস্থ রাখেঃ নিয়মিত হলুদ খেলে এটি অগ্ন্যাশয়কে প্রদাহের হাত থেকে রক্ষা করে অগ্নাশয়কে সুস্থ রাখে। রোজ হলুদ খেলে অগ্নাশয়ের ক্যান্সারও রোধ করা সম্ভব। 

যকৃত ঠিক রাখেঃ নিয়মিত খেলে এটি যকৃত ঠিক রাখে ও গলব্লাডারের কাজও ঠিকঠাক মতো হয়। যকৃতের প্রদাহ থেকেও এটি রক্ষা করে থাকে। 

কোলেস্টেরোল কমায়ঃ হলুদে থাকা কারকিউমিন মাত্র ১২ সপ্তাহে কোলেস্টেরোল কমিয়ে নিয়ে আসে। যাদের কোলেস্টেরোল আছে আর ওষুধ খান তারা ওষুধের পাশাপাশি নিয়ম করে হলুদ খেলে উপকৃত হবেন। 


এলাৰ্জির বিরুদ্ধে কাজ করেঃ কাঁচা হলুদ এন্টি এলার্জিক এজেন্ট হিসাবে কাজ করে থাকে। কারো খাবারে এলাৰ্জি থাকলে এটি তা দূর করে। 

মাথা ব্যথা কমায়ঃ এটি মস্তিষ্কের মিউকাস চলাচল বাড়িয়ে দেয় ফলে সাইনাসের সমস্যা ও মাথা ধরার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

চুল পড়া কমায়ঃ কাঁচা হলুদ খুশকির সমস্যা থেকে আমাদের বাঁচায় ফলে চুল পড়াও কমে যায়। 

দিনে কয়টা হলুদ খাবেন এবং কিভাবে খাবেন 

কাঁচা হলুদগুঁড়া দিনে ১-২ গ্রাম গুড় বা মধুর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে। কারো যদি হজমের সমস্যা থাকে তাহলে গোলমরিচের সাথে হলুদগুঁড়া মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যাবে। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস দুধের ভেতরে একটু হলুদ মিশিয়ে খেলেও উপকার হবে। হলুদ চা এর ভেতর দিয়েও খাওয়া যায়। এ ছাড়াও রোজ বিভিন্ন রান্নায় হলুদ তরকারিতে  দিয়ে খাওয়া হয়ে থাকে। 

রোজ ২৫০ মিলিগ্রাম হলুদ খেলেই তা যথেষ্ট। সকালে খালি পেটে হলুদ খাবার ৩০ মিনিট পর খাবার খাওয়া উচিত। রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে খাওয়া যায়। সকালে ও রাতে ২৫০ মিলিগ্রাম করে হলুদ খাওয়া যেতে পারে। এর বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এই পরিমান খেলেই যে কেউ ফল পাবে। 

কাঁচা হলুদ যাদের বিপদের কারণ হতে পারে

হলুদে রয়েছে পলিফেনলস বা কারকিউমিন নামক উপাদান যা সহজে হজম হয় না। তাই যাদের হজমে সমস্যা আছে তাদের একটু সতর্কতার সাথে খেতে হবে। তবে গোলমরিচের সাথে খেলে হজমপ্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। যারা গর্ভবতী তাদের হলুদ খাবার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ কাঁচা হলুদ জরায়ুর সংকোচন প্রসারণে সাহায্য করে ফলে গর্ভপাতের আশঙ্কা রয়েছে। ক্যান্সার প্রতিরোধে যারা অ্যান্টিক্যানসার ওষুধ খাচ্ছেন তাদের সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে কারণ হলুদ গ্রহণের ফলে এসকল ওষুধের কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। 

হলুদের-উপকারিতা-ও-খাওয়ার-নিয়ম

অ্যান্টিডায়াবেটিক ঔষধের কার্যকারিতাও এটি কমাতে পারে তাই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে হলুদ খেতে হবে। হলুদ বেশি খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। হলুদ রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতা কমিয়ে দেয় তাই যাদের ২ সপ্তাহের মধ্যে অপেরেশনের ডেট রয়েছে তাদের হলুদ খাওয়া উচিত নয়। কারণ এতে অধিক রক্তপাতের সম্ভাবনা থাকে। এটি ব্যথা নাশক ওষুধের কার্যকারিতা কমিয়ে দিতে পারে। হলুদ সবসময় উপকারী নাও হতে পারে ক্ষেত্রবিশেষে এটি বিপদের কারণ ও হতে পারে। 

কাঁচা হলুদ খাবার পূর্বে সাবধানতা 

যারা ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে থাকেন যেমন ইন্ডোমেথাসিন, অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রোফেন বা অ্যাসিটামিনোফেন ইত্যাদি এসকল ওষুধের প্রভাব কমাতে পারে হলুদের বিভিন্ন উপাদান। এছাড়াও যারা ওয়ারফারিন গ্রহণ করছেন, হলুদ খাবার ফলে তাদের রক্ত পাতলা হওয়ার ঝুঁকি আছে। 


কেউ যদি ক্যান্সারের জন্য কেমোথেরাপি নিয়ে থাকেন তাহলে তাদের হলুদ গ্রহণের পূর্বে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করা উচিত। যারা ইমিউনোসপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণ করছেন তারা যদি হলুদ খেয়ে থাকেন তাহলে হলুদে থাকা কারকিউমিন এর ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। 

হলুদ দিয়ে চা বানানোর নিয়ম

আদার মতো হলুদের মূল দিয়েও চা বানানো সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন ২ টেবিল চামচ কাঁচা হলুদের কাটা মূল বা ২ চা-চামচ হলুদগুঁড়া। এটি ১-২ কাপ পানিতে ৫ মিনিট রেখে ভালোভাবে ফুটিয়ে নিতে হবে। এরপর ছাকনি দিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। এতে মধু কিংবা লেবু যোগ করেও খাওয়া যেতে পারে ঠান্ডা ও গরম দুইভাবেই। এটি শরীরের জন্য অনেক উপকারী। 

শেষ কথা: হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

হলুদের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানতে পারলাম। হলুদ কতটুকু, কখন খেতে হবে এ ছাড়াও এটি কাদের খাওয়া উচিত নয় তা সম্পর্কে জানলাম। শরীর সুস্থ রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলুদের গুরুত্ব অপরিসীম। এটি শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায় ও শরীরকে কার্যক্ষম করে তোলে। তবে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি কোনোকিছু খাওয়ায় ঠিক না তাই পরিমাণমতো হলুদ গ্রহণ করতে হবে। 

আশা করি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি পড়েছেন। এ থেকে আপনারা উপকৃত হবেন বলে আশা রাখি। আমাদের এই পিএমড্রিম আইটি ওয়েবসাইটে আমরা নিয়মিত তথ্য প্রযুক্তি, অনলাইন ইনকাম, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, ব্যবসা, ভ্রমণ ইত্যাদি বিষয়ে আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি। তাই আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে আমাদের সাথে থাকুন। এতক্ষন ধরে সাথে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url