দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন
সুস্থতা সৃস্টিকর্তার অনেক বড়ো একটি নিয়ামত। দীর্ঘকাল সুস্থ এবং স্বাস্থ্যবান
থাকতে চান? দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন। এটি সম্পর্কে
জানা আমাদের জন্য অপরিহার্য।
সঠিক পুষ্টি, নিয়মিত ব্যায়াম, যথেষ্ট বিশ্রাম
এবং পর্যাপ্ত ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কীভাবে স্বাস্থ্যকর
জীবনযাপন করা সম্ভব, এই বিস্তারিত নির্দেশিকায় সবকিছু জানুন।
পোস্ট সূচিপত্রঃ দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন
- দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন
- স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যা আপনার শরীরের জ্বালানি
- সুষম খাদ্যের মূল উপাদান কোনগুলো
- শরীরকে সচল রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ও ব্যায়াম করা
- শারীরিক কার্যকলাপের প্রকারভেদ
- পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ রাখে
- মনের সুস্থতা মানসিক চাপ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে
- পর্যাপ্ত জল পান বা হাইড্রেটেড থাকা, দেহের ভেতরের আর্দ্রতা ঠিক রাখে
- দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের পথে বাধা হয় এমন ক্ষতিকারক অভ্যাস পরিহার করা
- সামাজিক সংযোগ ও ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপন করা
- শেষ কথাঃ দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন
দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন
দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন। এটি জানলে আপনি আপনার শরীর
নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারবেন। আমরা জানি যে "সুস্থতাই সম্পদ" এই প্রবাদটি
চিরন্তন সত্য। শারীরিক ও মানসিক সুস্বাস্থ্যই দীর্ঘ ও সুন্দর জীবনের প্রধান
চাবিকাঠি। সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে প্রয়োজন সঠিক জীবনধারা। এর ভিত্তি হলো, সুষম
আহার, নিয়মিত শরীরচর্চা এবং দুশ্চিন্তামুক্ত মন।
প্রতিদিন তাজা ফল ও সবজি খান, পর্যাপ্ত জল পান করুন। সকালে হাঁটুন বা ব্যায়াম
করুন যা আপনাকে সতেজ রাখবে। ঘুমের ঘাটতি যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
পাশাপাশি, মানসিক চাপমুক্ত থাকতে ইতিবাচক চিন্তা, সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখা
এবং প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানো জরুরি। এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই আপনাকে দীর্ঘ,
কর্মক্ষম ও সুখী জীবনের পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ যা আপনার শরীরের জ্বালানি
স্বাস্থ্যকর খাদ্য খাওয়া আমাদের দেহকে দীর্ঘদিন ধরে সুস্থ রাখার প্রথম এবং
অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। আমাদের দেহ একটি গাড়ির মতো, যা চালানোর জন্য
সঠিক মানের জ্বালানির প্রয়োজন। অস্বাস্থ্যকর ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চিনি এবং
ট্রান্স ফ্যাটযুক্ত খাদ্য আমাদের দেহের জন্য 'নিচু মানের জ্বালানি'র মতো, যা
ধীরে ধীরে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করে। আমরা আমাদের আশে পাশে অনেক ধরনের খাবার
দেখতে পায় যা খুবই মুখরোচক। এগুলো আমাদের সবারই খেতে ভালো লাগে। কিন্তু এই
খাবারগুলোই আমাদের শরীরে ধীরে ধীরে বিষে পরিণত হয়। এই জন্য এই সমস্ত খাবার
আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে। এবং সেই সাথে অন্যদেরও এই সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে
হবে।
আমরা সবাই চাই একটি দীর্ঘ, নীরোগ ও প্রাণবন্ত জীবন। কিন্তু আধুনিক ব্যস্ততা এবং
অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার কারণে অনেক সময়ই আমরা নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি
মনোযোগ দিতে পারি না। ফলস্বরূপ, খুব অল্প বয়সেই নানান রোগ আমাদের শরীরে বাসা
বাঁধে। শরীরকে দীর্ঘদিন সুস্থ রাখা কোনো রাতারাতি প্রক্রিয়া নয়, এটি একটি
জীবনব্যাপী অঙ্গীকার। এর জন্য প্রয়োজন কিছু প্রমাণিত অভ্যাস বা 'গোপন উপায়'
যা আমাদের দৈনন্দিন রুটিনের অংশ করে তুলতে হবে।
সুষম খাদ্যের মূল উপাদান কোনগুলো
বিভিন্ন ধরণের ফল ও সবজিঃ প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় কমপক্ষে ৩ থেকে ৫
ধরণের রঙিন ফল ও সবজি রাখুন। এগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন ও ফাইবারে
ভরপুর, যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং কোষের ক্ষয় রোধ করে। আর অবশ্যই সবজি
রান্নার সময় কম তেল ব্যবহার করুন এবং সপ্তাহে বিভিন্ন প্রকারের ফল ও সবজি
খাওয়ার লক্ষ্য রাখুন।
গোটা শস্যঃ প্রক্রিয়াজাত শস্যের পরিবর্তে ওটস, ব্রাউন রাইস এবং আটার রুটি খান।
এগুলিতে প্রচুর ফাইবার থাকে, যা হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং রক্তে শর্করার
মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
চর্বিহীন প্রোটিনঃ মাছ, মুরগির মাংস, ডাল, ডিম এবং টোফু প্রোটিনের ভালো উৎস।
প্রোটিন পেশী গঠনে এবং শরীরের মেরামতের কাজে সহায়তা করে। বিশেষ করে, সামুদ্রিক
মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হার্টের জন্য খুব উপকারী।
স্বাস্থ্যকর চর্বিঃ বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো এবং অলিভ অয়েলের মতো উৎস থেকে
স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণ করুন। এগুলি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং
প্রদাহ কমায়।
যেগুলো এড়িয়ে চলা জরুরিঃ চিনিযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, অতিরিক্ত লবণ, ফাস্ট
ফুড এবং প্যাকেটজাত খাবার গুলো পরিহার করা আমাদের জন্য অনেক জরুরি।
দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য শুধু কী খাওয়া হচ্ছে তা নয়, কখন খাবেন এবং কতটুকু
খাবেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। একবারে পেট ভরে না খেয়ে অল্প পরিমাণে বারবার খাবার
খেলে হজমের প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করে এবং ওজন বাড়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
শরীরকে সচল রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ও ব্যায়াম করা
শরীরকে সচল রাখার জন্য নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ ও ব্যায়াম অপরিহার্য। আমরা
অনেকেই খাওয়া দাওয়া, কাজ কর্মের উপর নির্ভর করে থাকি। যার জন্য আমাদের শরীরের
জন্য অনেক খারাপ পরিস্থিতি বয়ে আনে। এই জন্য আমাদের প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট
সময় ধরে শরীর চর্চা করা উচিত। এটি শুধু দেহের শক্তিই বাড়ায় না, মনকেও রাখে
প্রফুল্ল। ব্যায়াম শুধুমাত্র ওজন কমাতেই সাহায্য করে না, এটি হার্টকে সুস্থ
রাখে, হাড়কে শক্তিশালী করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এটি মানসিক
চাপ কমিয়ে মনোযোগ বৃদ্ধি করে। তাই আলস্য ত্যাগ করে আজই ব্যায়ামকে আপনার
নিত্যদিনের সঙ্গী করুন।
শারীরিক কার্যকলাপের প্রকারভেদ
প্রতিদিন অন্তত ২০-৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাইকেল চালানো বা অন্য
যেকোনো শারীরিক কার্যকলাপে যুক্ত হন। নিয়মিত ব্যায়াম ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখে। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩
দিন ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ করুন। এটি কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উন্নত করে।
এছাড়া দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো, সাঁতার কাটা যেগুলো রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তে
শর্করার মাত্রা হ্রাস এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়।
শক্তি প্রশিক্ষণঃ সপ্তাহে কমপক্ষে দুই দিন শক্তি প্রশিক্ষণের ব্যায়াম করুন, যা
শরীরের প্রধান পেশীগুলিকে লক্ষ্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ওজন তোলা, পুশ-আপ বা
স্কোয়াট করা।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় বরই খাওয়ার উপকারিতা
সুবিধাঃ পেশী ও হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি, যা বার্ধক্যে পতন বা ফ্র্যাকচারের ঝুঁকি
কমায়।
নমনীয়তা ও ভারসাম্যঃ যোগা বা স্ট্রেচিং আপনার শরীরের নমনীয়তা বজায় রাখে,
আঘাতের ঝুঁকি কমায় এবং বয়স বাড়ার সাথে সাথে ভারসাম্যহীনতা রোধ করে।
দৈনন্দিন জীবনে সচলতাঃ
- ব্যায়ামের জন্য জিমে যেতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। প্রতিদিনের রুটিনে সচলতা বাড়ান
- লিফটের বদলে সিঁড়ি ব্যবহার করুন।
- অফিসে বা বাড়িতে কাজের ফাঁকে ৫ মিনিটের জন্য উঠে হাঁটুন।
- গান শুনতে শুনতে ঘরের কাজ করুন বা বাগান করুন।
- কাজের স্থান থেকে একটু দূরে গাড়ি পার্ক করে হেঁটে আসুন।
পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম শরীর ও মনকে সতেজ রাখে
পর্যাপ্ত এবং গভীর ঘুম আমাদের শরীর ও মনের জন্য অন্যতম গোপন চাবিকাঠি।। দিনের
ক্লান্তি ও ক্ষয়ক্ষতি পূরণের জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। ঘুমের সময় শরীর নিজেদের
মেরামত করে, কোষের পুনর্জন্ম হয় এবং মস্তিষ্ক দিনের তথ্য প্রক্রিয়া করে।
প্রতি রাতে ৭-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়, স্মৃতিশক্তি
তীক্ষ্ণ করে এবং মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করে। ঘুমের সময় শরীর রোগ প্রতিরোধ
ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং কোষের মেরামত করে। অপর্যাপ্ত ঘুম শুধু ক্লান্তিই
আনে না, মানসিক চাপ ও মেজাজের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই, একটি সুস্থ ও সতেজ
জীবনের জন্য একটি নির্দিষ্ট ঘুমের রুটিন তৈরি করুন এবং গভীর নিদ্রাকে গুরুত্ব
দিন। ভালো ঘুম মানেই সুস্থ শরীর ও শান্ত মন। আমাদের শরীরে কেন ঘুম অপরিহার্য
তার বিশেষ কিছু কারণ রয়েছে। যেমন-
শারীরিক মেরামতঃ ঘুমের সময় গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা পেশী তৈরি এবং
ক্ষতিগ্রস্ত কোষ মেরামত করতে সহায়তা করে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাঃ পর্যাপ্ত ঘুম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, ফলে
অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি কমে।
মানসিক স্বাস্থ্যঃ ঘুম মস্তিষ্কের কার্যকারিতা, মনোযোগ এবং মেজাজ নিয়ন্ত্রণ
করে। ঘুমের অভাবে উদ্বেগ, বিষন্নতা এবং স্মৃতিশক্তির সমস্যা দেখা দিতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুমের কৌশলঃ
- প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা মানসম্পন্ন ঘুম প্রয়োজন।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান এবং সকালে নির্দিষ্ট সময়ে উঠুন।
- ঘুমানোর অন্তত ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল, ট্যাবলেট বা টিভি দেখা বন্ধ করুন কারণ স্ক্রিনের অতি বেগুনি রশ্নি ঘুম আসতে বাধা দেয়।
- শোবার ঘরকে অন্ধকার, ঠান্ডা এবং শান্ত রাখুন।
- রাতে কফি বা ভারী খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
মনের সুস্থতা মানসিক চাপ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে
শারীরিক সুস্থতা এবং মানসিক সুস্থতা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। দীর্ঘস্থায়ী মানসিক
চাপ শরীরের উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ,
ডায়াবেটিস এবং হতাশার ঝুঁকি বাড়ায়। এই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কিছু কৌশল
রয়েছে। যেমন-
ধ্যানঃ প্রতিদিনের জীবনে কয়েক মিনিটের জন্য ধ্যান বা মাইন্ডফুলনেস অনুশীলন
করুন। এটি মনকে শান্ত করে, মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং চাপের মাত্রা কমায়।
গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসঃ চাপের সময়ে ধীরে ধীরে গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া এবং ছাড়া
অভ্যাস করুন। এটি তাত্ক্ষণিকভাবে শরীরকে শান্ত করতে সহায়তা করতে পারে।
হবি বা শখের চর্চাঃ এমন কাজে সময় দিন যা আপনাকে আনন্দ দেয়, যেমন বই পড়া, গান
শোনা, ছবি আঁকা বা অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো।
সময় ব্যবস্থাপনাঃ কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করুন এবং 'না' বলতে শিখুন। অতিরিক্ত
দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
প্রকৃতির সাথে সময় কাটানোঃ সম্ভব হলে প্রকৃতির কাছাকাছি যান। পার্কে হাঁটা বা
খোলা আকাশের নিচে বসে থাকা মানসিক শান্তি এনে দিতে পারে।
পর্যাপ্ত পানি পান বা হাইড্রেটেড থাকা, দেহের ভেতরের আর্দ্রতা ঠিক রাখে
পানি আমাদের শরীরের জন্য অক্সিজেন এর মতোই জরুরি। আমাদের শরীরের ৬০% এর বেশি
অংশ পানি দ্বারা গঠিত। দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান
করা অপরিহার্য। পানি পানের বিশেষ কিছু গুরুত্ব রয়েছে। যেমন-
শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণঃ পানি শরীরের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে
রাখে।
বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণঃ পানি মূত্রের মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন বা বিষাক্ত
পদার্থ বের করে দিতে সাহায্য করে।
হজম ও পুষ্টি শোষণঃ হজম প্রক্রিয়া সচল রাখতে এবং খাদ্যের পুষ্টি উপাদান শোষণ
করতে পানি প্রয়োজন।
শক্তির মাত্রা ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতাঃ সামান্য ডিহাইড্রেশনও ক্লান্তি এবং
দুর্বল মনোযোগের কারণ হতে পারে। পর্যাপ্ত পানি পান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা সতেজ
রাখে।
পানি পানের অভ্যাসঃ প্রতিদিন অন্তত ৮ গ্লাস (২-৩ লিটার) জল পান করার লক্ষ্য
রাখুন। ব্যায়ামের আগে, চলাকালীন এবং পরে অবশ্যই জল পান করুন।
একটি রিইউজেবল জলের বোতল সবসময় সাথে রাখুন যাতে বারবার পানি পানের কথা মনে
পড়ে।
দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের পথে বাধা হয় এমন ক্ষতিকারক অভ্যাস পরিহার করা
কিছু অভ্যাস সরাসরি এবং মারাত্মকভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে এবং দীর্ঘ
জীবন লাভে বাঁধা দেয়। এগুলো পরিহার করাই দীর্ঘদিন সুস্থ থাকার ষষ্ঠ গোপন
উপায়। ধূমপান এবং অতিরিক্ত মদ্যপান সম্পূর্ণরূপে পরিহার করুন, যা অনেক গুরুতর
রোগ থেকে শরীরকে রক্ষা করবে।
ধূমপানঃ ধূমপান সব ধরণের ক্যান্সার, হৃদরোগ এবং ফুসফুসের রোগের অন্যতম প্রধান
কারণ। দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্য ধূমপান পুরোপুরি ত্যাগ করা আবশ্যক। ধূমপান
ছেড়ে দেওয়ার উপকারিতা শেষ সিগারেট খাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই শুরু হয়।
আরো পড়ুনঃ বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায়
অতিরিক্ত মদ্যপানঃ অতিরিক্ত মদ্যপান লিভারের ক্ষতি করে, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়
এবং ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিমিত করতে হবে বা
পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে।
অন্যান্য ক্ষতিকর অভ্যাসঃ
- দীর্ঘ সময় বসে থাকা (এড়িয়ে চলুন, প্রতি ঘণ্টায় একবার দাঁড়ান ও হাঁটুন)।
- প্রক্রিয়াজাত খাবারের উপর বেশি নির্ভর করা।
- নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এড়িয়ে যাওয়া।
সামাজিক সংযোগ ও ইতিবাচক সম্পর্ক স্থাপন করা
মানুষ সামাজিক প্রাণী। আমাদের শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি মানসিক ও আত্মিক
সুস্থতার জন্য সামাজিক বন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাকীত্ব এবং সামাজিক
বিচ্ছিন্নতা হতাশা, উদ্বেগ এবং এমনকি শারীরিক রোগের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বন্ধু-বান্ধব ও পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখুন এবং ভালো সামাজিক সম্পর্ক তৈরি
করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, শক্তিশালী সামাজিক বন্ধন দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন লাভে
সহায়তা করে। এছাড়াও সামাজিক সংযোগের কিছু উপকারিতা রয়েছে সেগুলো হলো-
মানসিক স্থিতিশীলতাঃ বিশ্বস্ত বন্ধু এবং পরিবারের সাথে মনের কথা ভাগ করে নিলে
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ কমে।
দীর্ঘায়ুঃ গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের শক্তিশালী সামাজিক সংযোগ আছে, তারা
অন্যদের তুলনায় বেশি দিন বাঁচে এবং সামগ্রিকভাবে সুখী হয়।
উদ্দেশ্যের অনুভূতিঃ সমাজে বা গোষ্ঠীতে যুক্ত থাকা জীবনে একটি উদ্দেশ্য এবং
মূল্যবোধের অনুভূতি যোগ করে।
কিভাবে সম্পর্কগুলি উন্নত করবেনঃ
- নিয়মিত বন্ধু ও পরিবারের সাথে দেখা করুন বা ফোনে যোগাযোগ রাখুন।
- কোনো ক্লাব, দল বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যোগ দিন।
- অন্যের প্রতি সহানুভূতিশীল হোন এবং অন্যদের সাহায্য করুন।
- নতুন বন্ধু তৈরি করতে উদ্যোগী হোন।
শেষ কথাঃ দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন
শেষ কথায় বলা যাই, "দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার ৭টি গোপন উপায় জেনে নিন"
আসলে কোনো জটিল রহস্য নয়। এগুলো হলো সুস্থ জীবন যাপনের জন্য কিছু প্রমাণিত এবং
মৌলিক অভ্যাস, যা বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত। এই সাতটি উপায়কে যদি একটি গাড়ির
চাকার সাথে তুলনা করা হয়, তবে একটি চাকাও যদি দুর্বল হয়, তাহলে গাড়িটি
ঠিকমতো চলবে না।
স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত ঘুম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ,
পর্যাপ্ত জল পান, ক্ষতিকারক অভ্যাস পরিহার এবং সামাজিক সংযোগ এই সাতটি স্তম্ভ
একত্রে আপনার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতাকে সুরক্ষিত রাখে। মনে রাখবেন, সুস্থ
থাকা একটি যাত্রা, গন্তব্য নয়। তাই, আজ থেকেই ছোট ছোট পরিবর্তন আনা শুরু করুন।
আপনার প্রতিটি ইতিবাচক পদক্ষেপ আপনার দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের ভিত্তি স্থাপন করবে।



পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url