পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এখন প্রায় সবার ঘরে ঘরে। এটি অনেকের কাছেই এক বিব্রতকর ও অস্বস্তিকর সমস্যা। খারাপ খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে আমাদের পরিপাকতন্ত্র আস্তে আস্তে দুর্বল হয়ে যায়। এর ফলে বদহজম, এসিডিটিসহ বিভিন্নরকম পেটের সমস্যা হয়ে থাকে। 
পেটে-গ্যাসের-ব্যথা-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়

সাধারণত খাবারের বদহজমের কারণে গ্যাস্ট্রিক হয়ে থাকে। এতে করে ডায়রিয়া, বমি ও পেট ব্যথা হতে পারে। এছাড়াও জ্বর, শক্তির অভাব ও পানিশূন্যতাও ঘটতে পারে।  আজ আমরা এই ব্লগে আলোচনা করবো কিভাবে পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়। তাই দেরি না করে চলুন শুরু করি।

পোস্ট সূচিপত্রঃ পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় অনেকগুলো রয়েছে। পেটে গ্যাস হওয়া খুব সাধারণ একটি সমস্যা এবং সহজেই এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। গ্যাসের সমস্যা হলে পেট অনেক সময় ফুলে থাকে। অন্ত্র ও পেটে গ্যাস জমা হয়ে থাকার ফলে এমন টা হয়ে থাকে। বিভিন্ন রকম ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার খাওয়া, ধূমপান ও মদ্যপানের কারণে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এর ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা হতে পারে। গ্যাস সাধারণত নিজে থেকেই চলে যায় তবে এটি কখনো কখনো তীব্র হতে পারে। ঘরোয়া বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করে গ্যাসের ব্যথা কমানো সম্ভব। 

গরম পানিতে লেবুঃ এক গ্লাস গরম পানিতে অর্ধেক লেবু চিপে এর সাথে একটু বিট লবন মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে হজম শক্তি ভালো হয় ও গ্যাস কমে যায়।

আদাঃ গ্যাস থেকে মুক্তি পেতে এটি একটি অন্যতম প্রাকৃতিক ও ঘরোয়া প্রতিকার। গ্যাসের ব্যথা দূর করতে আদা চিবিয়ে খান অথবা আদা চা পান করুন। এ ছাড়াও আদার রস, এক চিমটি গোল মরিচ গুঁড়া ও তাতে সামান্য লবন মিশিয়ে খেলে গ্যাসের ব্যথা দূর হয়ে যায়। 


দইঃ দইয়ে রয়েছে প্রোবায়োটিক উপাদান যা গ্যাসের ব্যথা নিরাময়ে সাহায্য করে। 

পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতায় থাকা মেন্থল অন্ত্রের পেশিকে শিথিল করে এবং গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে। খাবারের পর এক কাপ পুদিনা পাতার চা পান করা ভালো। এটি হজমেও সাহায্য করে। আবার এক গ্লাস গরম পানিতে পুদিনা পাতার রস দিয়ে খেলে পেট ঠান্ডা হয় ও গ্যাস ও জলদি কমে যায়। 

জিরা পানিঃ এক গ্লাস পানিতে এক চামচ জিরা সিদ্ধ করে নিয়ে ছেঁকে খেলে পেট হালকা হয় ও হজমে সাহায্য করে। 

পেঁপেঃ পেঁপে হজমে সাহায্য করে ও পেটে গ্যাস তৈরিতে বাধা দেয়। 

পর্যাপ্ত পানি পান করাঃ পেটে গ্যাসের সমস্যা সমাধানে পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করতে হবে। এতে করে পেটের ভেতর থেকে গ্যাস বের হয়ে যাবে। 

গ্যাসের ব্যথার কারণগুলো হলো

পরিপাকতন্ত্রে যখন অতিরিক্ত বাতাস বা গ্যাস আটকে যায় তখন ব্যথা হয়। এই আটকে থাকা গ্যাস অন্ত্রগুলিকে প্রসারিত করে এর ফলে পেটে খিঁচুনি, ফোলাভাব ও তীব্র ব্যথা হয়। গ্যাসের ব্যথার অনেক গুলো কারণ রয়েছে। দ্রুত খাবার খাওয়ার সময় অতিরিক্ত বাতাস গিলে ফেললে তা পরবর্তীতে গ্যাসে পরিণত হয়। অতিরিক্ত বা বেশি খাওয়ার ফলেও গ্যাসের ব্যথা হতে পারে। 
পেটে-গ্যাসের-ব্যথা-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়

আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মটরশুটি, মসুর ডাল, ব্রকোলি, পেঁয়াজ, চিরে, সফ্ট ড্রিংক, কৃত্রিম মিষ্টি যেমন সরবিটল এবং জাইলিটল ইত্যাদি খাবার পেটে গ্যাস তৈরী করে। এ ছাড়াও ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার ও গ্যাসের জন্য দায়ী। মানসিক টেনশন ও স্ট্রেসের কারণে হজমের গতি কমে যায় ও গ্যাসের সমস্যা বেড়ে যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য যখন মল দীর্ঘ সময় ধরে কোলনে জমা হয়ে থাকে তখন গ্যাসের ব্যথা হয়। 

পেটে গ্যাসের সাধারণ লক্ষণগুলো

  • পেট ফাঁপা ও পেট ফুলে যাওয়া 
  • ঢেঁকুর ওঠা ও পেট জ্বালাপোড়া করা 
  • পেটের মধ্যে ব্যথা ও অস্বস্তি হওয়া 
  • খিদে কমে যাওয়া
  • ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া 
  • পেটের মধ্যে গুড়গুড় আওয়াজ হওয়া
  • বুকে ব্যথা, বমি বমি ভাব এগুলো পেটে গ্যাসের লক্ষণ হতে পারে। 

গ্যাসের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়ার কার্যকর উপায় 

হাঁটাহাঁটি করাঃ হাঁটাহাঁটি করলে তা হজম প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করতে সাহায্য করে। খাবারের পর ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে তা অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে গ্যাসের স্বাভাবিক চলাচলকে উৎসাহিত করে যা পেটের ফাঁপা ভাব ও ব্যথা কমায়।

পেটের ওপর হিটিং প্যাড বা উষ্ণ জলের ব্যাগ রাখাঃ পেটের ওপর হিটিং প্যাড বা উষ্ণ জলের ব্যাগ  রাখলে তা পেশিগুলোকে শিথিল করে এবং রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে যা আটকে থাকা গ্যাসকে  আরও আরামদায়কভাবে চলাচলে সহায়তা করে।

কার্বোনেটেড জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলাঃ সোডা এবং অন্যান্য কার্বনেটেড পানীয় পান করলে পাচনতন্ত্রে অতিরিক্ত বাতাস প্রবেশ করতে পারে যার ফলে পেট ফাঁপা ও গ্যাস জমে যায়। গ্যাসের ব্যথা হলে এগুলো এড়িয়ে চলায় ভালো। 

আস্তে আস্তে খাবার খাওয়াঃ দ্রুত খেতে গেলে বাতাস গিলে ফেলার সম্ভাবনা থাকে। তাই আস্তে আস্তে ভালো করে খাবার চিবিয়ে খাওয়া উচিত। 

গ্যাস তৈরিকারী খাবার কম খাওয়াঃ মটরশুঁটি, মসুর ডাল, বাঁধাকপি, ফুলকপি, কৃত্রিম মিষ্টি যেমন সরবিটল ইত্যাদি খাবার গ্যাস তৈরী করে থাকে তাই গ্যাসের সমস্যা থাকলে এই খাবার গুলো কম খাওয়া বা এড়িয়ে চলায় ভালো।  

সব সময় হাইড্রেটেড থাকাঃ পর্যাপ্ত পরিমানে পানি পান করলে তা হজম প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে ফলে গ্যাসের সমস্যা কমে যায়। 

চারকোল ক্যাপসুল ব্যবহার করাঃ অ্যাক্টিভেটেড চারকোল পাচনতন্ত্রে গ্যাস আটকে রাখতে পারে এবং পেট ফাঁপা কমাতে পারে। ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে এটি ব্যবহার করতে হবে কারণ এর কার্যকারিতা ব্যক্তিভেদে পরিবর্তন হতে পারে। 


সেমিথিকন ট্যাবলেট গ্রহণ করাঃ সেমিথিকন ট্যাবলেট পেট ও অন্ত্রের গ্যাস বুদ্বুদ আকারে ভেঙে দেয় যা পেট ফাঁপা কমায়। 

পেট হালকা ম্যাসাজ করাঃ বৃত্তাকার গতিতে পেট ম্যাসাজ করলে অন্ত্রের মধ্যে দিয়ে গ্যাস চলাচল করতে পারে ফলে অস্বস্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ঘড়ির কাটার দিকে আলতো করে পেট ম্যাসাজ করতে হবে। 

হালকা কিছু ব্যায়াম করাঃ যোগব্যায়ামের মতো হালকা ব্যায়াম আটকে থাকা গ্যাস দূর করতে সাহায্য করে। 

যে যে খাবারগুলো গ্যাস বাড়ায় ও কমায় 

বাঁধাকপি, ফুলকপি, দুধ (ল্যাকটোজ ইন্টলারেন্সে), চিড়া, মসুরের ডাল, ভাজাপোড়া, চর্বিজাতীয় খাবার, কার্বোনেটেড জাতীয় পানীয়(সোডা, কোলা) ইত্যাদি খাবার গ্যাস বাড়াতে পারে। অপরদিকে জিরা, আদা, লেবু, পুদিনা, এলাচ, মৌরি, রসুন, দই, ডাবের পানি গ্যাস কমাতে সাহায্য করে। 

জীবনযাপনের যে পরিবর্তনগুলো গ্যাস কমাতে সাহায্য করে 

নিয়মিত হাঁটাচলা ও হালকা ব্যায়াম করা। বিশেষ করে খাওয়া দাওয়ার পর ১০-১৫ মিনিট হাঁটাহাঁটি করা। ধীরে ধীরে ও ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার খাওয়া। দ্রুত খাওয়া এড়িয়ে চলা। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা। পর্যাপ্ত পরিমানে পানি না খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পার। ধূমপান ও এলকোহল জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা। ভরা পেটে শুতে না যাওয়া। খাবার খাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে পড়লে হজমের গতি কমে যায়। 

যে শারীরিক সমস্যাগুলোর জন্য গ্যাস হতে পারে 

  • গ্যাস্ট্রোএন্টেরাইটিস (পেটের সংক্রমণ) এর কারণে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। 
  • ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা (দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার হজম না হওয়া) কারণে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। 
  • আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আন্ত্রিক গোলমাল) এর কারণে হতে পারে। 
  • ডায়াবেটিস যাদের আছে তাদের গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। 
  • যাদের পেপটিক আলসার(পেটে ঘা) আছে তাদের হতে পারে। 
  • ক্রোন্স ডিজিজ (আন্ত্রিক প্রদাহজনিত রোগ) এর কারণে গ্যাস হতে পারে। 
  • সেলিয়াক রোগ (গ্লুটেন সহ্য না হওয়া) কারণে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। 

গ্যাসের সমস্যা সমাধানে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে

অতিরিক্ত মসলাদার ও তৈলাক্ত খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত মসলাদার খাবার খেলে পেটে সমস্যা হতে পারে। আর বাইরে খেলে ঝোলজাতীয় খাবার ত্যাগ করতে হবে। খাবারের পরিমান ও মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতিরিক্ত প্রোটিনজাতীয় খাবার খেলে গ্যাসের সমস্যা হতে পারে। তাই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাছ-মাংস, দুধ না খাওয়ায় ভালো। নিয়মিত হাঁটাহাঁটি ও শরীরচর্চা করতে হবে। এতে পেটে গ্যাস জমার সম্ভাবনা কমে যাবে। 
পেটে-গ্যাসের-ব্যথা-কমানোর-ঘরোয়া-উপায়

এছাড়াও আমরা অনেকেই রাস্তায় বের হলেই ভাজা পোড়া খেতে পছন্দ করি। এগুলো গ্যাস তৈরির মূল উপাদান। এগুলো খেলে আমাদের খাবার রুচি কমে যায়। ফলে আমাদের শরীরে ভিটামিন এর ঘাটতি দেখা দেয়। এই জন্য আমাদের বাইরের খাবার গ্রহণ থেকে সবসময় দূরে থাকা উচিত। তাহলে আমরা পেটে গ্যাস থেকে অনেকটা রক্ষা পাবো।

কখন ডাক্তার দেখাতে হবে 

আটকে থাকা গ্যাস ক্ষতিকারক না এবং প্রায়শই অস্থায়ী তবুও এমন সময় আসতে পারে যখন এটি কোনও অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্যগত অবস্থার ইঙ্গিত দিতে পারে। যদি পেটে তীব্র ব্যথা হয় এবং ব্যথা স্থায়ী থাকে, পেট অতিরিক্ত ফুলে বা ফেঁপে যায় বা অন্যান্য হজমের সমস্যা গুরুতর হয় তাহলে তখন ডাক্তারের সাথে পরার্মশ করা জরুরি হয়ে পড়ে। 


ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম, ল্যাক্টোজ ইনটলারেন্স বা সিলিয়াক রোগের মতো অবস্থা গ্যাসের মতো রোগের লক্ষণগুলির কারণ হতে পারে এবং একজন স্বাস্থসেবা পেশাদার এই সমস্যাগুলি সনাক্ত করতে ও পরিচালনা করতে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও যদি পেটের ব্যথার সাথে ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য বা ওজন হ্রাসের সমস্যা দেখা দেয় তাহলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা জরুরি। 

শেষ কথা: পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

পেটে গ্যাসের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে আশা করি ভালো একটা ধারণা পেয়েছেন। পেটে গ্যাসের সমস্যা হলে একটি অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়, কিন্তু যদি সঠিক কৌশল অবলম্বন করা হয় তাহলে এই সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায়। কথায় আছে পেট ঠান্ডা তো দুনিয়া ঠান্ডা। তাই পেটে যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে কোনো কাজ করেই শান্তি পাওয়া যায় না। পেটে সমস্যা হলে ঘরোয়া ভাবে প্রথমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করতে হবে আর তাতে সমাধান না পেলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। 

আমরা এতক্ষন পেটের ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায় সম্পর্কে জেনেছি। আরো জেনেছি গ্যাসের ব্যথার কারণ, লক্ষণ, ব্যথা দূরীকরণের কার্যকর উপায়, কি কি খেলে গ্যাস হবে ও কি কি খেলে  গ্যাস কমবে এ সব কিছুই আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পুরো আর্টিকেলটি আপনারা মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন। ধৈর্য সহকারে পড়ার জন্য আপনাদের ধন্যবাদ। এমন আরো নতুন নতুন বিষয় জানার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটটি ফলো দিয়ে রাখতে পারেন। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url