বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায়
প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আলোচনা করব বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায় সম্পর্কে।
আমরা অনেকেই আছি যারা না চাইতেই দিনে দিনে অনেক মোটা হয়ে যাচ্ছি বা ওয়জন বেড়ে
যাচ্ছে। অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু কোনো ভাবেই নিজের শরীরের ওজন কমাতে পারছি না।
তাদের সকল সমস্যা সমাধানের জন্য আজকে আমরা এই আর্টিকেলটি লিখেছি। এই আর্টিকেল
পড়ে আমরা জানতে পারব- ওজন কমানোর উপায়, কিভাবে আপনি বাড়িতে বসে আপনার ওজন কমাতে
পারবেন? তাই দেরি না করে চলুন আলোচনাটা শুরু করি।
পোস্ট সূচিপত্রঃ বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায়
- বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায়
- মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
- প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
- ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
- ২০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
- ১৫ দিনে ৫ কেজি ওজন কমানোর উপায়
- ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়
- ওজন কমাতে যে সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন
- শেষ কথাঃ বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায়
বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায়
বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায় সম্পর্কে জানার আগে আমরা আমাদেরকে অর্থাৎ
নিজেকে প্রশ্ন করি যে আমরা কি পরিশ্রমী নাকি অলস টাইপের মানুষ। যদি আপনার
উত্তরটা পরিশ্রমি হয় তাহলে আপনার দ্বারা ওজন কমানো সম্ভব আর যদি উত্তরটা অলস হয়
তাহলে আপনার দ্বারা ওজন কমানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে। তাই ওজন কমানোর প্রথম শর্ত
হলো একজন পরিশ্রমী মানুষ হওয়া। পরিশ্রমি মানুষ হতে পারলে আমরা খুব দ্রুত আমাদের
শরীরের ওজন কমাতে পারব। বাড়িতে বসে ওজন কমানোর জন্য আপনাকে যা করতে হবে সেগুলো
হলো-
পানি পান করুন- পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আমাদের প্রত্যেকের শরীরে
কমপক্ষে ৫০ থেকে ৭০% পানি থাকা উচিত। তার মানে হচ্ছে প্রতিদিন গড়ে আমাদেরকে ৭
থেকে ৮ গ্লাস পানি পান করা দরকার। আমাদেরকে প্রতিদিন খালি পেটে পানি খাওয়ার
অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। খালি পেটে পানি খেলে আমাদের পেট কিছুটা ভরা ভরা মনে হবে
তখন কম ক্ষুধা লাগবে। এতে করে আমরা কম খাবার খাব তখন আমাদের ওজন নিয়ন্ত্রণে
আসবে। তাই প্রতিদিন সকালে এবং দুপুরে ও রাত্রে খাওয়ার ঠিক ৩০ মিনিট আগে পানি
খেতে হবে তাহলে ওজন কমানো সম্ভব হবে।
ব্যয়াম করুন-শরীরের ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ব্যয়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন
করে থাকে। প্রতিদিন আমাদেরকে নিয়মিত ব্যয়াম করতে হবে। ব্যয়াম করলে আমাদের
শরীরের ক্যালরি ক্ষয় হয় তখন আমাদের শরীরের ওজন কমতে শুরু করে। তাই
প্রতিদিন সকালে বা বিকালে আমাদেরকে ব্যয়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। ব্যয়ামের
মধ্যে আমাদেরকে দৌড়া দৌড়ি, সাইকেল চালানো বা হাঁটার ব্যয়াম করতে হবে। তাহলে
আমাদের শরীরের ক্যালরি ক্ষয় হবে এবং দ্রুত ওজন কমবে।
খাদ্যাভাস পরিবর্তন করুন- খ্যাদ্যাভাস পরিবর্তন করলে আমরা দ্রুত শরীরের ওজন
কমাতে পারব। আমরা অনেকেই আছি যারা ওজন কমাতে চাই কিন্তু খেতে অনেক পছন্দ করি।
ওজন কমাতে হলে আমাদেরকে খাবার দাবারের প্রতি অনেক সচেতন হতে হবে। প্রতিদিন
সকালে ভারী খাবার খেতে হবে তারপর দুপুরে এবং রাতে হালকা খাবার খেতে হবে। চিন্তা
করুন আপনি সকালে যদি ভারী খাবার খেয়ে অফিস যান তাহলে আপনি সেই ভারী খাবার খেয়ে
অনেক কাজ করবেন।
আরো পড়ুনঃ বরই পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা
এবং দুপুরে হালকা খাবার খেয়ে আবার কাজ করেন তাহলে আপনার অনেক ক্যালরি
ক্ষয় হবে এবং রাত্রেও যদি আপনি হালকা খাবার খান তাহলে আপনার শরীরে শর্করার
মাত্রা অনেক কমে যাবে এবং আপনার ওজন দ্রুত কমে যাবে। তাই খাবার খাওয়ার সময়
অবশ্যই পুষ্টিকর খাবার অর্থাৎ সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। আর যাই খাবেনে,
অল্প করে খাবেন তাহলে আপনার পেট অনেক সময়ের জন্য ভর্তি থাকবে এবং আপনার
অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যাবে।
পর্যাপ্ত ঘুম- ঘুম আমাদের শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় একটা উপাদান। আমরা না
ঘুমালে আমাদের শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে যায় এবং আমরা কাজের প্রতি মনোযোগী হতে
পারি না। আর বেশি পরিমাণে ঘুমালে আমাদের শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তাই ওজন কমানো জন্য আমাদেরকে ঘুমাতে হবে কিন্তু সময় মেনে ঘুমাতে হবে। তাহলে
আমাদের শরীর ঠিক থাকবে এবং কাজ করতেও ভালো লাগবে। প্রতিদিন আমাদেরকে ৭ থেকে ৮
ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
তাহলে আমাদের শরীরে আর কোনো ক্লান্তি থাকবে না। রাত্রে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে
পড়বেন এবং একদম সকাল সকাল উঠার চেষ্টা করবেন তাহলে আপনি সকাল থেকেই অনেক কাজ
করতে পারবেন। এজন্য রাত্রে খাওয়া দাওয়া করে একটু হাটাহাটি করে ঘুমিয়ে পড়ুন।
তাহলে আপনার দ্বারা শরীরে ওজন কমানো সম্ভব হবে।
সকালে ওজন মাপা- প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ওজন মাপার অভ্যাস করতে হবে। তাহলে
আপনার মধ্যে ওজন কমানোর আগ্রহ জন্ম নিবে। ধরুন আজকে সকালে আপনি আপনার ওজন
মাপলেন এবং দেখলে যে আপনার ওজন ৯০ কেজি। তাহলে আপনার মধ্যে একটি অনুশোচনা আসবে
যে আপনার ওজন ৯০ কেজি হয়ে গেছে তাহলে এই ৯০ কেজি ওজন কমাতে হলে আপনাকে কতটুকু
পরিশ্রম করতে হবে।
সারাদিন পরিশ্রম করার পর রাত্রে ঘুমিয়ে পরের দিন সকালে
পুনরায় ওজন মাপলেন এবং দেখলেন যে আপনার ওজন ৮৮ কেজি হয়ে গেছে। তখন আপনার মনে
একটি আনন্দ লাগা কাজ করবে এবং আপনি আপনার কাজের প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হবেন।
এই জন্য আপনাকে প্রতিদিন সকালে ওজন মাপার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
চিনি থেকে দূরে থাকুন- আমরা প্রতিদিন সকালে বা বিকেলে চা বা কফি খেতে পছন্দ
করি। আপনি চা কফি খান কোনো সমস্যা নেই কিন্তু ওজন কমানোর জন্য আপনাকে অবশ্যই
চিনি ছাড়া চা বা কফি খেতে হবে। চিনিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে শর্করা যা শরীরে
ক্যালরি বাড়াতে সাহায্য করে এবং ওজন বৃদ্ধি করে। এজন্য চা বা কফি খেলে চিনি
ছাড়া খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এই চিনি দিয়ে চা কফি খাওয়ার পরিবর্তে আপনি
সবুজ চা খেতে পারেন।
এই সবুজ চা আপনি যদি দিনে দুই থেকে তিনবার খান এবং একটানা
এক সপ্তাহ খান তাহলে আপনার শরীরের ক্যালরি অনেক কমে যাবে এবং আপনার ওজনও কমে
যাবে। তাই আপনি আপনার খাবারে এই সবিজ চা বা গ্রিন টি রাখতে পারেন। তাহলে ওজন
কমানোর ক্ষেত্রে এটি আপনার জন্য অনেক বেশি সহায়ক হবে।
প্রতিদিন টার্গেট ঠিক করুন- প্রতিদিন আপনি আপনার শরীরের ওজন কমানোর জন্য কয়েকটি
টার্গেট ঠিক করতে পারেন। যেমন মনে করেন যে আজকে সকালে উঠে ৫০০০ ধাপ হাটবেন,
বাড়িতে লিফট এর পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করবেন, অফিসে যাওয়ার সময় হেঁটে যাবেন বা
অফিস যদি দূরে হয় তাহলে গাড়িতে করে গিয়ে অফিস থেকে কিছুদূর আগেই নেমে তারপর
হেঁটে যাবেন। এরকম প্রতিদিনের জন্য ছোট ছোট টার্গেট গ্রহণ করুন। এবং পালন করার
চেষ্টা করুন তাহলে আপনার ওজন দ্রুত কমে যাবে।
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায় জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ভাববেন যে এভাবেও কি
ওজন কমানো সম্ভব? আমাদের দেশের মেয়েরা সাধারণত বাড়িতেই থাকে যার কারণে তাদের
ওজন দ্রুত বেড়ে যায়। বর্তমানে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হওয়াই অনেক
মেয়েরা অলস হয়ে যাচ্ছে যার কারণে তাদের ওজন বেড়ে যাচ্ছে। মেয়েরা চাইলেই বড়িতে
বসে তাদের ওজন কমাতে পারবে। তাদের ওজন কমানোর জন্য তাদেরকে শুধুমাত্র তাদের
কাজের ধরনটা পরিবর্তন করতে হবে। তাহলেই তারা বাড়িতে বসেই তাদের ওজন দ্রুত কমাতে
পারবে। কিভাবে মেয়েরা দ্রুত ওজন কমাবে তা হলো-
মেঝে ঝাড়ু দেওয়া ও মোছা- মেয়েরা প্রতিদিনই ঘরের মেঝে ঝাড়ু দেয় ও মোছে। মোছার
ক্ষেত্রে তারা যদি মোছার জন্য মপ ব্যবহার না করে আগের যুগের মায়েদের মতো কাপড়
ভিজিয়ে ভিজিয়ে বসে হাটু গেড়ে ঘরের মেঝে মুছে তাহলে তাদের পেটে এক প্রকার চাপ
সৃষ্টি হবে এবং তাদের অনেক ক্যালরি ক্ষয় হবে। এতে করে তারা তাদের ওজন কমাতে
পারবে। এছাড়াও দরজা, জানলা মোছা মোছি করতে পারে। এতে করে তাদের হাতের ব্যয়াম
হবে।
কাপড়, বাসন ধোয়া- কাপড় কাচার সময় যান্ত্রিক মেশিন ব্যবহার না করে নিজের হাতে
কাচা। ঠিক একই ভাবে থালা বাসন নিজের হাতে ধোয়া। এই কাজগুলো করলে হাতের ব্যয়াম
হয়। এই কাজ করার মাধ্যমে হাতের হাড় মজবুত হয়।
রান্না করা- মেয়ে হিসেবে প্রত্যেক মেয়েকেই রান্না শিখতে হয়। অনেক মেয়েই আছে
যারা কাজের ব্যস্ততায় রান্না করার সময় পায় না। তাদের উচিত সপ্তাহে একদিন নিজের
হাতে তরকারি কেটে, মশলা বেটে রান্না করা। বর্তমানে ব্লেন্ডার মেশিন আসার কারণে
অনেক মেয়ে সিলপাটাতে মশলাই বাটতে চায় না। আপনার বাড়িতে যদি সিলপাটা থেকে থাকে
তাহলে আপনি সেটি ব্যবহার করতে পারেন। তাহলে আপনার হাত ভালো থাকবে।
আরো পড়ুনঃ মরিঙ্গা পাউডার খাওয়ার সঠিক নিয়ম
লিফট এড়িয়ে চলা- অনেক মহিলা আছে যারা সিঁড়ি ব্যবহার করতে চান না। সবসময় লিফটে
উঠে যাওয়া আসা করতে পছন্দ করে। তাদের উচিত প্রতিদিন লিফট বাদ দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে
উঠা নামা করা। এতে করে তাদের শরীরের ক্যালরি দ্রুত ক্ষয় হবে এবং ওজন কমতে শুরু
করবে।
ঘুম- মেয়েরা বাড়িতে থাকার ফলে তারা কাজ কাম শেষ করেই অনেকে ঘুমাতে পছন্দ করে।
যার জন্য তাদের ওজন না কমে ক্রমাগতভাবে বৃদ্ধি পেতেই থাকে। সেজন্য অতিরিক্ত না
ঘুমিয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমাতে হবে। দিনের বেলায় যতদূর সম্ভব ঘুম এড়িয়ে চলতে
হবে। কারণ দিনের বেলায় ঘুমালে শরীর অনেক ভারী হয়ে যায়।
ব্যয়াম করা- মেয়েরা অনেক সমস্যার কারণে বাড়ির বাইরে যেতে পারে না। সেজন্য তারা
চাইলে তাদের বাড়ির উঠানে বা ছাদে বা তাদের ঘরেই কিছুক্ষন হাঁটাহাঁটি করতে পারে।
এতে করে তাদের শরীরের ক্যালরি ক্ষয় হবে এবং সেই সাথে তাদের শরীর একটু ক্লান্ত
হবে এবং রাত্রে ভালো ঘুম হবে।
পরিমাণ মতো খাবার খাওয়া- প্রতিদিন অল্প অল্প করে খাবার খেতে হবে। বেশি খাবার
গ্রহণের ফলে শরীরের মেদ বেড়ে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি পায়। এজন্য প্রতিদিন চেষ্টা
করতে হবে নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খাওয়ার। আর খাবারের তালিকায় পুষ্টিকর খাবার
রাখতে হবে। প্রতিদিন কিছু হালকা খাবার গ্রহন করতে হবে। যেমন ফলমূল, গমের রুটি,
মুড়ি, বিস্কুট ইত্যাদি। এগুলো খাবার খেলে অনেক সময় ধরে পেট ভরা থাকে এবং খাওয়ার
প্রবণতা থাকে না।
প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
এই পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব প্রতিদিন ১ কেজি করে দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
সম্পর্কে। আপনি প্রতিদিন যদি ১ কেজি করে ওজন কমাতে পারেন তাহলে আপনার জন্য
যথেষ্ট। এই টার্গেট নিয়ে আপনি যদি প্রতিদিন কাজ করেন তাহলে আপনার দ্বারাই সম্ভব
হবে। প্রতিদিন ১ কেজি ওজন কমাতে চাইলে প্রথমেই যে জিনিষটা দরকার সেটা হলো কঠোর
পরিশ্রমি হওয়া। আপনাকে প্রতিদিন সমান তালে কঠোর পরিশ্রম করে যেতে হবে এবং কম
পরিমাণে খাবার গ্রহণ করতে হবে।
এক্ষেত্রে একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে সেটি হলো
যেহেতু আপনি কঠোর পরিশ্রম করবেন সেহেতু চেষ্টা করবেন পুষ্টিকর খাবার খেতে বা
সুষম খাবার খেতে তাহলে আপনার শরীরে ক্লান্তি ভাবটা আসবে না। এবং সবথেকে যে
বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সেটি হলো পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
প্রতিদিন এই নিয়ম মেনে চলতে পারলে আপনি প্রতিদিন ১কেজি করে ওজন কমাতে পারবেন।
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে এখন আলোচনা করব। অনেকেই মনে করতে পারে
যে ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমানো সম্ভব কি না। হ্যাঁ সম্ভব, এর জন্য আপনাকে অনেক
সতর্ক হয়ে জীবন যাপন করতে হবে। জীবনের প্রতিটা ধাপে ধাপে আপনাকে নিয়ম মেনে চলতে
হবে। তাহলেই আপনি ৭ দিনে ১০ কেজি ওজন কমাতে পারবেন। অনেক মানুষ আছে যাদের
কর্মের ক্ষেত্রে ওজন কমানোর প্রয়োজন পড়ে। কারণ অনেক সময় অনেক অফিসে পদোন্নতির
জন্য ওজনকে অনেক গুরুত্ব দেয়।
এজন্য তারা চায় যত দ্রুত সম্ভব শরীরের ওজন কমানো।
এক্ষেত্রে আপনাকে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো খাবারের প্রতি সতর্ক
হওয়া। আপনি চাইলেই ইচ্ছামত মাছ মাংস খেতে পারবেন না। আপনাকে নিয়মিত পুষ্টিকর
খাবার খেতে হবে। এবং অল্প পরিমাণে খেতে হবে। এমন খাবার আপনাকে আপনার
খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে যেগুলো খেলে আপনার পেট অনেক সময় ধরে ভরা থাকবে। তাহলে
আপনার শরীরের ক্যালরি ক্ষয় হবে। দ্বিতীয়ত আপনাকে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করার
অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
আপনি যত বেশি পানি পান করবেন আপনার শরীর থেকে তত বেশি
ক্ষতিকর পদার্থ বের হয়ে যাবে এবং সেই সাথে আপনার ক্ষুধা কমে যাবে। তখন আপনি
বেশি খাবার খেতে পারবেন না। তৃতীয়ত দুপুরে ও রাত্রে হালকা খাবার গ্রহণ করতে
হবে। আপনি চাইলে সারাদিনই হালকা খাবার গ্রহন করতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরের
ওজন কমানোর জন্য অনেক বেশি সহায়ক হবে। চতুর্থত আপনাকে প্রতিদিন নিয়মিত ব্যয়াম
করতে হবে।
আপনার হাতে যদি খুব বেশি সময় না থাকে তাহলে আপনি অন্তত ৩০ মিনিট
ব্যয়াম করুন তাহলেই আপনার জন্য ভালো হবে। ব্যয়ামের মধ্যে আপনি একটু হাঁটাহাঁটি,
সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটা রাখতে পারেন। এগুলো ব্যয়াম করলেই আপনার শরীরের ওজন
অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্বব হবে। পঞ্চমত আপনাকে সমস্ত মানসিক চিন্তা বাদ দিতে
হবে। সবসময় ফ্রি থাকার চেষ্টা করতে হবে। কোনো কিছুতেই চাপ নেওয়া যাবে না।
এবং
ভালো ঘুম দিতে হবে। আপনি যদি ভালো ঘুম দিতে না পারেন তাহলে আপনি কাজ করার শক্তি
পাবেন না। কাজে মনোযোগ দিতে পারবেন না, একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যাবেন। তাই ভালো
ঘুম দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। সাধারণত এই কাজগুলো নিয়মিত করলেই আপনি খুব অল্প
সময়ের মধ্যেই অনেকখানি ওজন কমাতে সক্ষম হবেন।
২০ কেজি ওজন কমানোর উপায়
২০ কেজি ওজন কমানো কি আদৌ সম্ভব? হ্যাঁ সম্ভব, এই সকল কিছু নির্ভর করছে আপনার
উপর। আপনি চাইলেই এটা এক মাসের ভেতর করা সম্ভব। এর জন্য আপনাকে পুরো এক মাস
একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী জীবন যাপন করতে হবে। এই এক
মাসের মধ্যে আপনি যদি এক দিনও অবহেলা করেন তাহলে আপনি পিছিয়ে পড়বেন। সবচেয়ে
ভালো হয় আপনি যদি আপনার খাদ্যতালিকা সম্পর্কে একটি তালিকা তৈরি করেন। আপনাদের
বোঝার সুবিধার্থে আমি একটি খাদ্য তালিকা আপনাদের সাথে সহভাগিতা করছি।
সকালে- ঘুম থেকে উঠে মুখ হাত ধয়ে খালি পেতে এক গ্লাস পানি বা দুই গ্লাস পানি
খাবেন তাহলে আপনার পেটের ক্ষুধা কমে যাবে। তারপর সকাল ৭ থেকে ৭ঃ৩০ টার মধ্যে
সকালের খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। এই সকালের খাবারে কোনো ভারী খাবার না খেয়ে
১গ্লাস দুধ, বাদাম, কিছু ফল খেতে পারেন। খাওয়ার শেষে আপনার বাড়ির কাজ বা যদি
অফিসে যান তাহলে অফিসের কাজ করবেন। আবার যখন ১০ঃ০০টা বাজবে তখন কিছু হালকা
খাবার খেয়ে নিবেন। আর একটা কথা আমাদের মনে রাখতে হবে যে যখনই আমরা খাবার খাব
তখনই যেন খাবার কম খাই এবং পানিটা বেশি খাই। তাহলে আমাদের শরীরের জন্য অনেক
ভালো হবে।
দুপুরে-দুপুরে চেষ্টা করবেন ১ঃ০০টার সময় খাবার খেতে। এই সময় চাইলে আপনি এক বা
দুই চামুচ ভাত খেতে পারবেন। এবং তরকারি হিসেবে অবশ্যই শাক সবজি খাবেন। সপ্তাহে
১ থেকে ২ দিন মাছ মাংস খাবেন তাহলেই হবে। প্রতিদিন দুপুরে একই পরিমাণ খাওয়ার
চেষ্টা করবেন। আমরা অনেকেই আছি যারা একটু ভালো তরকারি পেলেই একেবারে যতগুলো
পারা যায় ভাত খাই। এটা করা যাবে না। যত ভালোই তরকারি হোক বা খারাপ তরকারি হোক
খাওয়া একেবারে একই পরিমাণ থাকাতা জরুরি।
বিকালে- বিকাল ৪ঃ০০টার সময় আপনি হালকা নাস্তা করতে পারেন। এই সময় আপনি চা খেতে
পারবেন কিন্তু তা অবশ্যই চিনি ছাড়া খেতে হবে। কারণ চিনি দিয়ে চা খেলে আপনার ওজন
না কমে বরং বেড়ে যাবে। এই সময় কিছু ফল খেতে পারেন। যেমন- আপেল, আঙ্গুর, কলা
ইত্যাদি।
রাত্রে- আমরা যারা বাংলাদেশে বাস করি বা আমরা যারা বাঙালি রয়েছি তারা বেশিরভাগ
সময় রাত্রে একেবারে বেশি করে খেতে পছন্দ করি। এটা করা একবারেই উচিত হবে না।
কারণ রাত্রে আপনি যদি বেশি পরিমাণে খাবার খান তাহলে আপনার জন্য অনেক ক্ষতিকর
একটা দিক হবে। রাত্রে আমরা কেউ পরিশ্রম করি না। সাধারণত খেয়ে আমরা ঘুমাই পড়ি,
এতে করে আমাদের শরীর অনেক ভারী হয়ে যায় এবং ওজন বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা থাকে।
তাই
রাত্রে ভারী খাবার না খেয়ে আমরা গমের রুটি, বা পাউরুটি খেতে পারি। রাত্রের
খাবার ৮ঃ০০ টার মধ্যে খেলে ভালো হয়। কারণ আপনি যদি রাত ৮ঃ০০ মধ্যে খাবার গ্রহণ
করেন তাহলে ঘুমাতে ঘুমাতে আপনার খাবার হজম হয়ে যাবে এবং আপনার ভালো ঘুম হবে। আর
একটি কাজ করতে পারেন সেটি হলো আপনি ঘুমাতে যাওয়ার আগে ১ গ্লাস দুধ খেতে পারেন।
তাহলে আপনার শরীরের জন্য অনেক উপকার হবে। দুধ খাওয়ার সময় অবশ্যই চিনি ছাড়া
খাবেন।
পুরো ২০ দিন এই খাবার তালিকা মেনে চললে আপনার শরীরের ওজন এক মাসেই কমানো সম্ভব।
এই খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি আপনি চাইলে একটু ব্যয়াম করতে পারেন তাহলে আপনার
শরীরের ক্যালরি আরো ক্ষয় হবে এবং আপনার শরীরের ওজন আরো দ্রুত কমতে শুরু করবে।
খুব বেশি সময় ধরে যে আপনাকে ব্যয়াম করতে হবে তেমনটা নয়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট
ব্যয়াম করলেই আপনার জন্য যথেষ্ট হবে। এই নিয়মগুলো টানা এক মাস মেনে চলতে পারলেই
আশা করি আপনার ওজন এক মাসে ২০কেজি কমানো সম্ভব।
১৫ দিনে ৫ কেজি ওজন কমানোর উপায়
১৫ দিনে ৫ কেজি ওজন কমাতে হলে আপনাকে কয়কটি বিষয় মাথায় রাখা খুবই জরুরী। ১৫
দিনে ওজন কমাতে চাইলে আপনাকে আপনার খাবার দাবারের উপর বেশি পরিমাণে ফোকাস দিতে
হবে। প্রতিদিন পুষ্টিগুন সম্পন্ন খাবার খেতে হবে। চেষ্টা করবেন আপনার
প্রতিদিনের খাবারে যেন একটু সুষম খাবার থাকে। আর এই খাওয়া দাওয়ার পাশাপাশি
আপনার শরীরের ক্যালরি কমানোর জন্য আপনাকে প্রচুর ব্যয়াম করতে হবে।
অর্থাৎ খাবার
খাবেন কম কিন্তু ব্যয়াম বা পরিশ্রম করবেন বেশি তাহলেই আপনার শরীরের ওজন দ্রুত
কমবে। ব্যয়াম বা পরিশ্রম করার পর প্রতিদিন চেষ্টা করবেন ১০ গ্লাস পানি পান করার
জন্য। তাহলে আপনার শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দিবে না। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট
রুটিন মেনে চললে অবশ্যই আপনি পারবেন ১৫ দিনে ৫ কেজি ওজন কমাতে।
ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায়
ব্যায়াম না করে ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে এখন আমরা জানব। ব্যয়াম না করেও শরীরের
ওজন কমানো সম্ভব। ওজন কমানো জন্য আপনাকে বুদ্ধি করে একটু সচেতন হয়ে চলতে হবে
তাহলেই আপনি ব্যয়াম না করেই ওজন কমাতে পারবেন। ব্যায়াম না করে ওজন কমাতে চাইলে
আপনাকে আপনার খাবারের দিকে নজর দিকে হবে। বেশি পরিমাণ খাওয়া থেকে দূরে থাকতে
হবে সব সময়ের জন্য। খাওয়ার সময় আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে আপনি কম খাবার
খেয়েছেন। প্রতিদিন নিয়ম করে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে খাবার খাবেন।
আর অবশ্যই
খাবার যেন আপনার পুষ্টিগুন সম্পন্ন হয় এবং খাবারে যেন প্রচুর পরিমাণে ফাইবার
থাকে। কারণ এই ফাইবার গ্রহণ করলে আমাদের শরীরের ক্যালরি অনেক ক্ষয় হয়। আর তখনই
আমাদের শরীরের ওজন কমতে শুরু করে। প্রতিদিন খাবারের প্রায় ৩০ মিনিট আগে এক
গ্লাস পানি খেয়ে নিবেন তাহলে আপনার অতিরিক্ত খাওয়ার আগ্রহ কমে যাবে। ফাইবার
ছাড়াও আপনি খাবারের মধ্যে যেগুলোতে মাঝারি ধরনের প্রোটিন আছে সেগুলো গ্রহণ করতে
পারেন। এই রুটিন মেনে প্রতিদিন চললেই আপনার ওজন এমনিতেই হ্রাস পাবে। এর জন্য
আপনাকে আর কষ্ট করে ব্যয়াম করতে হবে না।
ওজন কমাতে যে সমস্ত খাবার এড়িয়ে চলবেন
ওজন কমাতে হলে আমাদেরকে কিছু খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। এমন কিছু খাবার আছে যেগুলো
গ্রহন করলে আপনার ওজন কমাতে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। বিশেষ করে আমরা অনেকেই ভাজাপোড়া
খেতে পছন্দ করি। যেমন- বার্গার, পিজ্জা, পুরি, সিঙ্গাড়া ইত্যাদি। এগুলো খেলে
আপনার গ্যাসের সমস্যা হবে এবং গুলো আপনার শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করবে,
কমাতে নয়। এছাড়াও বেশি পরিমাণে সাদা ভাত খেতে পারবেন না।
আরো পড়ুনঃ ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
ভাতে অনেক শর্করা
রয়েছে যা শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ঠিক একই ভাবে সাদা রুটিও খাওয়া
যাবে না। আমাদের শরীরের ওজন বেশি হয়ে থাকলে আমাদেরকে মিষ্টি জাতীয় খাবার দাবার
থেকে দূরে থাকতে হবে। মিষ্টি খেলেও আমাদের শরীরের ওজন বাড়তে পারে। এছাড়াও কোমল
পানীয় যেগুলো আছে যেমন- সোডা যুক্ত পানি, এনার্জি ড্রিংক্স ইত্যাদি। এগুলো
এড়িয়ে চলতে হবে। এগুলো শরীরের ওজন কমাতে বাধাগ্রস্থ হয় যার জন্য এগুলো থেকে
নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
শেষ কথাঃ বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায়
বাড়িতে বসে ওজন কমানোর ৭টি উপায় সম্পর্কে আশা করি অনেক কিছু জানতে পেরেছেন।
উপরে যে সমস্ত বিষয় আলোচনা করা হয়েছে প্রায় সবগুলোই অনেক কার্যকরী। তবে বাঙালি
হিসেবে আমাদের ধৈর্য শক্তি অনেক কম। আমরা সবকিছুই অনেক দ্রুত আশা করি। সবকিছু
দ্রুত আশা করলেও এই শরীরের ওজন কমানোটা দ্রুত আশা করা সঠিক নয়। কারণ অনেক
দ্রুত ওজন কমাতে গিয়ে অনেক সময় শরীরে অনেক বড় দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তাই ওজন
কমানোর ক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন ধীরে ধীরে ওজন কমানোর। তাহলে আপনার শরীরের উপর
কোনো প্রভাব পড়বে না। আসলে শরীরের ওজন কমানোটা হলো নিজের কাছে। আপনি প্রতিদিন
যে পরিমাণ খাবার গ্রহণ করেন তার চেয়ে কম গ্রহণ করার চেষ্টা করবেন এবং নিয়মিত
পরিশ্রম করবেন তাহলেই আপনার শরীরের ওজন কমানো সম্ভব হবে। আমাদের এই পিএম ড্রিম
আইটি ওয়েবসাইটে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
আমাদের
এই সাইটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য, অনলাইন ইনকাম, তথ্য ও প্রযুক্তি, ব্যবসা ইত্যাদি
সম্পর্কে আর্টিকেল নিয়মিত পাবলিশ করা হয়। তাই আপনার জীবন পরিবর্তন করতে আজই
আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করে আমাদের পাশেই থাকুন। আর আমাদের ওয়েবসাইটের
আর্টিকেলের মধ্যে যদি কোনো ভুল থেকে থাকে বা কোনো পরামর্শের প্রয়োজন হয় তাহলে
তা নির্ধিদ্বায় নিচে কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে পারেন। ধন্যবাদ।
পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url