ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
প্রিয় পাঠক, আমাদের এই পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। আজকেই এই পোস্টে আমরা জানতে পারব
যে ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে, ভাতের মাড়ে কি কি উপাদান আছে, এটি খেলে
আমাদের শরীরে কি কি উপকার হবে এবং অপকার হবে, এটি খাওয়া আসলেই স্বাস্থ্যের জন্য
ভালো কি না।
এই সমস্ত বিষয়ে আজকে আলোচনা করব। আমরা অনেক সময় অনেক সমস্যাই ভুগে
থাকি। সেই সকল সমস্যা সমাধানের জন্য ভাতের মাড় কিভাবে কাজ করে সেই বিষয় সম্পর্কেও
আজকে আমরা জানব। তাহলে চলুন আলোচনাটা শুরু করি-
পোস্ট সূচিপত্রঃ ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
- ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
- ভাতের মাড়ে যে সব উপাদান বিদ্যমান
- ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরে যে উপকারগুলো হবে
- ভাতের মাড় খাওয়ার উপযুক্ত সময়
- ভাতের মাড় খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
- ভাতের মাড় দিয়ে আপনি যে সমস্ত সুস্বাদু খাবার তৈরি করবেন
- ভাতের মাড়ের আরো কিছু ব্যবহার
- ভাতের মাড়ে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে তার তালিকা
- শেষ কথাঃ ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম আবার আছে না কি? যে ভাবে খুশি সেভাবে খেলেই তো হয় না কি?
আমরা অনেক সময় এরকমটা ভেবে থাকি এবং এমনটা করেও থাকি। কিন্তু এটি করা ঠিক নয়।
ভাতের মাড় অনেক পুষ্টিকর একটি খাবার। আমরা অনেকেই এর গুনাগুণ সম্পর্কে জানি না।
এই জন্য ভাত রান্নার পর ভাতের মাড় ফেলে দেই। কিন্তু আমরা যদি গ্রামের দিকে যায়
তাহলে দেখতে পাব যে তারা এই ভাতের মাড় কত মজা করে খায়।
কিন্তু শহরের মানুষ এটিকে কোনো গুরুত্ব না দিয়ে ফেলে দেয়। এই ভাতের মাড়ের মধ্যে
অনেক উপাদান আছে যা আমাদের শরীরের মহাঔষধ হিসেবে কাজ করে। এই ভাতের মাড় খাওয়ার
অবশ্যই কিছু নিয়ম রয়েছে। নিয়ম না মেনে খেলে আমাদের শরীরে অনেক ক্ষতির সম্ভাবনা
থাকে। তাই কিভাবে ভাতের মাড় খাওয়া উচিৎ তা জানতে আমাদের এই পোস্টটি মনোযোগ দিয়ে
পড়ুন।
ভাতের মাড়ে যে সব উপাদান বিদ্যমান
ভাতের মাড়ে যে সব উপাদান বিদ্যমান রয়েছে তা জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ভাতের
মাড়ে অনেক পুষ্টি উপাদান আছে যা খেলে আপনার শরীরের অনেক ধরনের সমস্যার সমাধান হয়ে
যাবে। এই ভাতের মাড়ে আপনি পাবেন জিংক, খনিজ, ম্যাঙ্গানিজ, কপার, লৌহ, ক্যালসিয়াম
পটাশিয়াম সহ অনেক ধরনের পুষ্টি উপাদান।
ভাতের মাড়ে কতগুলো পুষ্টি উপাদান আছে তা জানতে এই পোস্টের একবারে নিচে চলে যান।
সেখানে একটি চার্ট বানিয়ে দেওয়া আছে। সেখানে আপনি জানতে পারবেন যে ভাতের মাড়ে কি
কি খাদ্য উপাদান আছে এবং এই খাদ্য উপদান কি কি রোগ ভালো করতে সক্ষম।
ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরে যে উপকারগুলো হবে
ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরে যে উপকারগুলো হবে তা জানলে ভাতের মাড় খাওয়ার রুচি
আপনার অনেক গুন বেড়ে যাবে। এই ভাতের মাড় রান্না করার সময় চালের পুষ্টি ধীরে ধীরে
পানির সাথে মিশে যায় এবং মাড় তৈরি হয়। অর্থাৎ চালে যে পরিমাণ পুষ্টি থাকে সেগুলো
সব পানির সাথে মিশে যায়। যার ফলে এটি আমাদের শরীরের জন্য অনেক কার্যকরী ভূমিকা
পালন করে থাকে। এই ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরের যে সমস্ত উপকার হবে সেগুলো হলো-
ডায়রিয়া ভালো হয়ঃ আমাদের অনেক সময় ডায়রিয়া হয়। সেই সময় আমরা সচরাচর খাবার খেতে
পারি না। অনেকেরই আবার শরীর অনেক দূর্বল হয়ে পড়ে। তাদের জন্য এই ভাতের মাড় অনেক
উপকারী একটি খাদ্য। এটি খেলে আপনার শরীরের পানির অভাব পূরণ হয়। আপনি চাইলে এই
মাড়ের সাথে একটু লবণ বা লেবুর রস মিশিয়ে খেতে পারেন। তাহলে বেশি উপকার পাবেন।
আরো পড়ুনঃ চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ আমরা অনেকেই আছি যাদের ওজন তুলনামূলকভাবে বয়সের সাথে
সামঞ্জস্য না। অর্থাৎ বয়স অনুযায়ী আমাদের যে পরিমাণ শরীরের ওজন থাকার কথা তার
থেকে অনেক বেশি ওজন থাকে। তাদের জন্য এই ভাতের মাড় অনেক উপকারী। এই ভাতের মাড়ের
মধ্যে রয়েছে অল্প পরিমাণে ক্যালরী কিন্তু পুষ্টিগুন অনেক ক্ষেত্রেই বেশি।
এই ভাতের মাড় আপনি নিয়ম করে দিনে ১ থেকে ২ গ্লাস খান তাহলে আপনার ওজন কমতে শুরু
করবে।
হজমের সমস্যা দূর করেঃ আমরা অনেকেই আছি যাদের অনেক বেশি ক্ষুধা লাগে কিন্তু খেতে
পারি না। বা অনেকক্ষণ আগে খেলে সেটি হজম হতে অনেক বেশি সময় লাগে। তাদের এই সমস্যা
দূর করতে ভাতের মাড়ের কোনো জূড়ি নেই। আপনি ভাত খাওয়ার আধা ঘন্টা আগে যদি এই মাড়
খেতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার হজম শক্তির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
চর্বি কমাতে সাহায্য করেঃ অনেক মানুষ আছে যাদের অতিরিক্ত চর্বির কারণে শরীর অনেক
ঝুলে পড়ে। অনেক সময় তাদের চেহারার সৌন্দর্য হারিয়ে যায়। তাদের জন্য এই মাড় খুবই
উপকারী। এই মাড়ে রয়েছে ক্যালরী যা আপনার ক্ষুধাকে কমিয়ে দিবে এবং আপনি অনেক সময়
ধরে কাজ করতে পারবেন। আর সেই সময় আপনার চর্বি কমতে শুরু করবে। তবে যাদের চর্বি
বেশি তাদেরকে প্রতিদিন নিয়ম করে এই ভাতের মাড় খেতে হবে। তাহলে ভালো ফলাফল পাওয়া
যাবে।
পেশি গঠনে সহায়তা করেঃ আপনি যদি প্রতিদিন শরীর চর্চা করে থাকেন তাহলে শরীর চর্চা
করার আগে ১ গ্লাস ভাতের মাড় খেয়ে নিবেন তাহলে দেখবেন শরীর চর্চা করার সময় অনেক
ক্যালরী পাবেন এবং একটু বেশি সময় ধরে শরীর চর্চা করতে পারবেন। এক্ষেত্রে আপনার
পেশি গঠনে অনেক বেশি সহায়ক হবে। এক গ্লাস মাড়ে প্রায় আট ধরনের অ্যামাইনো এসিড আছে
যেগুলো পেশি গঠনের জন্য অনেক কার্যকরী।
মোটাতাজা হতে সাহায্য করেঃ আমরা অনেক মানুষ আছে যারা অনেক পাতলা, রোগা। যাদের
দেখতে খুব একটা ভালো লাগে না। তারা চাইলেই এই ভাতের মাড় খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে
পারে। এই মাড় প্রতিদিন ২ গ্লাস খেলেই দেখবে আপনার শরীরের অনেক পরিবর্তন হতে শুরু
করবে।
স্মরণ শক্তি বাড়ায়ঃ অনেক মানুষ আছে যারা খুব অল্প সময়েই সব কিছু ভুলে যাই। মনে
রাখতে পারে না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যারা ছাত্র-ছাত্রী আছে। তাদের মধ্যে এই ধরনের
সমস্যা লক্ষনীয় হয়। তারা পড়া মনে রাখতে পারে না। তাদের জন্য ভালো মানের ঔষধ হলো
এই মাড়। মাড় খেলে তাদের স্মরণ শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে।
শরীর ও ত্বককে ভালো রাখেঃ এই ভাতের মাড়ে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যেগুলো আপনার
শরীরকে ভেতর থেকে চাঙ্গা করে তুলতে সাহায্য করবে এবং আপনি অনেক কাজ করার সামর্থ
অর্জন করবেন। আবার একইভাবে আপনি যদি এই ভাতের মাড় আপনার ত্বকে ব্যবহার করেন তাহলে
আপনার ত্বকের পুরানো দাগ উঠে যাবে এবং আপনার ত্বককে করবে অনেক আকর্ষনীয়।
চুল পড়া কমায়ঃ অনেক কারণে আমাদের মাথার চুল পড়ে যায়। যার ফলে মাথা ফাকা হয়ে যায়।
মানুষের সামনে যেতে লজ্জা লাগে। এই ধরনের সমস্যা মূলত ভিটামিন ই এর অভাবে হয়ে
থাকে। তাই আপনি যদি নিয়মিত এই ভাতের মাড় খান ও চুলে লাগান তাহলে দেখবেন আপনার
শরীরে ও মাথার ত্বকের ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়ে যাবে এবং চুল পড়া বন্ধ হবে,
সাথে চুলের গোড়া অনেক শক্ত ও মজবুত হবে।
হাড়ের দূর্বলতা দূর করেঃ এই ভাতের মাড়ের ভেতর অনেক ক্যালসিয়াম আছে যা আমাদের
শরীরের হাড়ের দূর্বলতাকে দূর করে। এই ক্যালসিয়ামের অভাবে অনেকের হাড়ের ভেতরে একটু
ব্যথা বা জ্বালা পোড়া অনুভব হয়। তাদের জন্য এই মাড় অনেক বেশি উপকারী। তাই যাদের
ক্যালসিয়ামের অভাব রয়েছে তাদের এই মাড় খাওয়ার অভ্যাস করা অতীব জরুরী। বিশেষ করে
যারা গর্ভাবস্থায় আছে তাদের জন্য এই মাড় ভাত অনেক উপকারী। এই মাড় ভাত গ্রহনের ফলে
তাদের শরীরে যে ক্যালসিয়ামের অভাব থাকে তা পূরণ হয়ে যায়। সেই সাথে গর্ভের শিশুর
হাড়ের বিকাশ ঘটে। ফলে মা ও শিশু দুইজনেই সুস্থ্য থাকে। প্রতিবন্ধী হওয়ার ভয় থাকে
না।
ঘুমের সমস্যা দূর করেঃ যাদের রাত্রে ঘুম হয় না। অর্থাৎ ঘুমের সমস্যা আছে তারা যদি
এই মাড় নিয়ম করে খাওয়া শুরু করে তাহলে তাদের ঘুমের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। কারণ এই
ভাতের মাড় একটি ভারি খাবার। এটি অনেক ক্ষণ ধরে পেটে থাকে যার কারণে শরীর ভারী হয়ে
যায় এবং ঘুম ঘুম ভাব আসে।
এনার্জি যোগায়ঃ আমরা যখন কাজ করি তখন খেয়াল করলে দেখবে অনেক সময় আমরা একটু কাজ
করলেই ক্লান্ত হয়ে যায় তখন অনেক বড় বড় শ্বাস নেই। এর কারণ হচ্ছে আমাদের শরীরে
এনার্জির অভাব রয়েছে। এই মাড় খাওয়ার পরে আপনি কাজ করে দেখবেন আগের তুলনায় বেশি
সময় ধরে কাজ করতে পারবেন। কারণ এই মাড়ের মধ্যে রয়েছে কার্বোহাইড্রেড যা এনার্জি
উৎপাদনের একটি উৎস।
সাধারণ রোগের সমাধানঃ আমরা কিংবা আমাদের পরিবারে অনেক সময় দেখা যায় যে কারো পেট
ফেপে যায় বা ফুলে যায়, কারো কোষ্ঠকাঠিন্ন হয়। এই সমস্ত রোগ নিরাময় করতে এই ভাতের
মাড়ের কোনো জুড়ি নেই। এই মাড় নিয়মিত খেলে কয়েকদিনের মধ্যেই আবার স্বাভাবিক জীবনে
ফিরে আসা সম্ভব।
পাকস্থলী সবল রাখেঃ বেশির ভাগ মানুষেরই পাকস্থলীতে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
অনেকের খাবার হজম হতে সমস্যা হয়। অনেকের আবার খাবার রুচিই হয় না। তাদের এই সমস্যা
সমাধানের জন্য এই মাড় খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই মাড় খাওয়ার ফলে
আপনার হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে এবং পাকস্থলীর কার্যকারীতা বৃদ্ধি পাবে।
উচ্চ রক্তচাপ কমায়ঃ আমাদের অনেকেরই ডায়াবেটিস রয়েছে। বা অনেকেরই সহ্য ক্ষমতা কম
থাকার জন্য খুব দ্রুত মাথা গরম করে ফেলি। যার ফলে আমাদের রক্তে কলেস্টেরলের
পরিমাণ বেড়ে যায় এবং উচ্চ রক্তচাপ হয়। এই উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য আপনি যদি
নিয়মিত মাড় খেতে পারেন তাহলে দেখবেন কয়েকদিনের মধ্যেই আপনার রক্তের কলেস্টেরলের
পরিমাণ কমে গিয়েছে এবং উচ্চ রক্তচাপ হবার আসঙ্কাও কমে গিয়েছে।
আরো পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
উপরে উল্লিখিত কারণগুলো পড়ে বুঝতেই পারছেন যে ভাতের মাড়ের ভূমিকা কতটুকু। আপনি
যদি প্রতিদিন নিয়মিত এই ভাতের মাড় খাওয়ার অভ্যাস করেন তাহলে দেখবেন আপনার শরীরের
অনেক সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন। আমরা এতক্ষণ ভাতের মাড় খেলে আমাদের শরীরে কি
কি উপকার হবে সে সম্পর্কে জানলাম। এখন আমরা জানব যে ভাতের মাড় কিভাবে খাওয়া যায়?
তাহলে চলুন জেনে নিই ভাতের মাড় খাওয়ার সঠিক নিয়মগুলো।
ভাতের মাড় খাওয়ার উপযুক্ত সময়
ভাতের মাড় খাওয়ার উপযুক্ত সময় আছে কি না? এর উত্তর হলো হ্যাঁ আছে। আপনি চাইলেই যে
কোনো সময় এই ভাতের মাড় খেতে পারবেন না। সব কিছুরই কিছু না কিছু নিয়ম কানুন আছে।
সেই নিয়ম কানুন না মানলে পরবর্তীতে অনেক সমসসার মুখোমুখী হতে হয়। তাই অবশ্যই
আপনাকে নিয়ম মেনে ভাতের মাড় খেতে হবে। এই ভাতের মাড় আপনি কয়েকটি উপায়ে নিতে
পারবেন।
আপনি যখন রান্না করবেন তখন রান্না হয়ে গেলে মাড় আলাদা করে নিবেন। আবার চাইলে সেই
মাড় ফ্রিজে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে আপনি ১ সপ্তাহের বেশি এই মাড়
রাখতে পারবেন না। ১ সপ্তাহের বেশি হয়ে গেলে সেই মাড় ফেলে দিন। এই মাড় আপনি
প্রতিদিন ১ থেকে ২ গ্লাস খতে পারবেন। মাড় খাওয়ার উপযুক্ত সময় হলো দুপুরে এবং
রাত্রে। এই দুই সময় আপনি ভাতের মাড় খেতে পারবেন। তবে চেষ্টা করবেন ভাত খাওয়ার আধা
ঘন্টা আগে খেতে তাহলে বেশি উপকার পাবেন।
আবার চাইলে আপনি মাড়ের সাথে একটি লেবু বা দারুচিনি ভালো করে মিশিয়েও খেতে পারেন।
এতে করে আপনার খাওয়ার রুচি একটু বৃদ্ধি পাবে। এই মাড় ঠান্ডা না খাওয়াই ভালো ভাত
রান্না করার পর যখন একটু কুসুম কুসুম গরম থাকবে তখনি খাওয়ার চেষ্টা করবেন। তাহলে
খেতে ভালো লাগবে। এই মাড় আপনি এমনিও খেতে পারেন আবার ভাতের সাথেও খেতে পারবেন।
যেভাবে আপনার সুবিধা সেই ভাবে খাবেন।
ভাতের মাড় খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা
ভাতের মাড় খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরী। এই ভাতের মাড় শরীরের জন্য
অনেক উপকারী কিন্তু অতিরিক্ত খাওয়া একদমই উচিৎ নয়। অতিরিক্ত মাড় খেলে আপনার শরীরে
অনেক সমস্যা দেখা দিবে। যেমন আপনি যদি মোটা মানুষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি এই মাড়
বেশি পরিমাণে খেতে পারবেন না। বেশি পরিমাণে খেলে আপনার শরীরের ওজন আরো বেশি বেড়ে
যাবে, বধহজম হতে পারে, ঘুম বেশি হতে পারে।
আবার আপনার যদি ডায়রিয়া থাকে আর সেই সময় যদি আপনি বেশি পরিমাণ খেয়ে ফেলেন তাহলে
আপনার ডায়রিয়া আরো বেশি হয়ে যাবে। তখন ঘন ঘন পায়খানা হওয়ার কারণে আপনার শরীরে
পানি শূন্যতা হতে পারে। কারণ এতে রয়েছে ফাইবার জাতীয় উপাদান।
ভাতের মাড় দিয়ে আপনি যে সমস্ত সুস্বাদু খাবার তৈরি করবেন
ভাতের মাড় দিয়ে আপনি যে সমস্ত সুস্বাদু খাবার তৈরি করবেন তা হলো স্যুপ, খিচুড়ি,
সস এবং কিছু ভাজা পোড়া খাবার। এই খাবার গুলো ইচ্ছা করলেই আপনার বাড়িতেই তৈরি করতে
পারবেন। স্যুপ তৈরির ক্ষেত্রে আপনি যখন কর্ণফ্লাউয়ার দেন তখন তার পরিবর্তে আপনি
এই মাড় দিতে পারেন। তাহলে একটি সুন্দর স্যুপ তৈরি হয়ে যাবে। যা খেলে আপনার শরীরে
অনেক পুষ্টি পাবেন।
আরো পড়ুনঃ ডুমুর ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা
ঠিক একই ভাবে খিচুড়ি রান্না করার সময়ও আপনি যখন পানি দেন সেই সময়ে পানি না দিয়ে
মাড় দিতে পারেন। এভাবেই আপনি প্রত্যেকটা খাবারে পানির পরিবর্তে মাড় দিয়ে রান্না
করে তৈরি করতে পারেন সুস্বাদু সব খাবার। আসলে সকল মাড়ে একই পরিমাণ পুষ্টি থাকে
না। এই পুষ্টি নির্ভর করবে আপনার চাল কিধরনের তার উপর। একেক ধরনের চালের একেক
ধরনের পুষ্টি হয়ে থাকে। সকল চালে একই পরিমাণ শর্করা বা আমিষ থাকে না। তাই পুষ্টির
দিক থেকে কিছুটা তারতম্য হতে পারে।
ভাতের মাড়ের আরো কিছু ব্যবহার
ভাতের মাড়ের আরো কিছু ব্যবহার রয়েছে। শুধু মাত্র খেলেই যে উপকার হবে এমনটি নয় এটি
যদি আপনি আপনার ত্বকে ব্যবহার করেন বা চুলে ব্যবহার করেন তাহলেও এটি অনেক ভালো
ফলাফল দেয়। আপনার যদি ত্বকে ব্রণ থাকে তাহলে আপনি প্রতিদিন রাত্রে ঘুমাতে যাওয়ার
আগে একটু করে মেখে ভালো করে ম্যাসাজ করে ঘুমান। এবং সকালে উঠে ভালো করে কোনো ভালো
মানের ফেসওয়াশ দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন ব্যবহার করলে ১.৫ সপ্তাহ থেকে ২
সপ্তাহের মধ্যে ব্রণ কমে যাবে এবং আপনার চেহারায় সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে।
আবার আপনার চুলে যদি ফাটা রোগ থাকে বা চুল পড়াতে থাকে তাহলে আপনি নিয়ম করে
প্রতিদিন ভাতের মাড় আপনার চুলে লাগাতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনার চুলের সকল রোগ ভালো
হয়ে যাবে এবং আপনার চুলের উজ্জলতা ফিরে আসবে আর চুলের গোড়া হবে শক্ত ও মজবুত।
তাহলে বুঝতেই পারছেন ভাতের মাড়ের কার্যকারিতা কতটুকু।
ভাতের মাড়ে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে তার তালিকা
ভাতের মাড়ে যে সমস্ত উপাদান রয়েছে তার তালিকা এবং সেই উপাদানের অভাবে যে সমস্ত
রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় তার একটি তালিকা টেবিলের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলো
যাতে করে আপনারা এক নজরে সকল উপাদান দেখে বুঝে নিতে পারেন। তাহলে আপনার প্রয়োজন
অনুযায়ী আপনি ভাতের মাড় গ্রহণ করতে পারেন।
ক্রমিক নং | উপাদান | যে রোগের সহায়ক |
---|---|---|
১ | ক্যালসিয়াম | হাড় মজবুত ও শক্তিশালী করে |
২ | আয়রন | রক্তশূন্যতা, মাথা ব্যাথা, দূর্বলতা |
৩ | জিংক | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি |
৪ | লৌহ | রক্তের লোহিত কণিকা তৈরি করে |
৫ | কপার | থাইরয়েডের সমস্যা সমাধান করে |
৬ | ফসফরাস | পেশী সংকোচনে সাহায্য করে |
৭ | আয়োডিন | মস্তিস্কের গঠনে সহায়তা করে |
৮ | নিয়াসিন | স্মৃতি ভ্রষ্ট, ডায়োরিয়া, হৃদপিণ্ড সুস্থ্য রাখতে সহায়তা করে |
৯ | ম্যাঙ্গানিজ | ব্লাড পেশার নিয়ন্ত্রণ করে |
১০ | ফাইবার | অতিরিক্ত ওজন, কোষ্ঠকাঠিন্ন, হৃদরোগের সহায়ক |
শেষ কথাঃ ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
ভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভালো করে পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
আশা করি এই পোস্টটি পড়ে আপনি অনেক উপকার পেয়েছেন, অনেক কিছু জানতে ও বুঝতে
পেরেছেন। এই পোস্টে আপনি জানতে পেরেছেন যে ভাতের মাড় খাওয়া উচিত কি না, কখন খাওয়া
দরকার, এই মাড়ের মধ্যে কি কি উপাদান বিদ্যমান রয়েছে তার সমস্ত কিছুই আপনি জানতে
পেরেছেন।
এই ধরনের আরো আপডেট তথ্য পেতে আপনি আমাদের এই ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে পারেন।
আপনি আমাদের এই পিএম ড্রিম আইটিতে অনলাইন ইনকাম, শিক্ষা ও সাস্থ্য, তথ্য
প্রযুক্তি, ব্যবসা বিষয়ক সকল টিপস এন্ড ট্রিক্স সম্পর্কে জানতে পারবেন যা আপনার
জীবনকে বদলে দিতে সক্ষম। এতক্ষণ আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও
কৃতজ্ঞতা জানাই।
পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url