গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
প্রিয় পাঠক, আর্টিকেল লিখার শুরুতেই আপনাকে জানাই আমাদের এই ব্লগার ওয়েবসাইটে
স্বাগতম। আজকে আমরা আলোচনা করব গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়? আমাদের
পরিবারে যখন কেউ গর্ভবতী হয় তখন আমরা অনেকেই বুঝে উঠতে পারি না যে
কিভাবে একজন গর্ভাবতী মায়ের যত্ন করতে হয় বা বলতে পারি না যে কিভাবে ঘুমালে তার
জন্য ভালো হবে। আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুমানোর অবস্থান
এবং উপকার ও অপকার সম্পর্কে জানব। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।
পোস্টের সূচিপত্রঃ গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
- ভূমিকাঃগর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
- গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার কারণ কি?
- গর্ভবস্থায় ঘুম না হলে কি করতে হবে?
- গর্ভাবস্থায় ভালো ঘুমের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন
- গর্ভাবস্থায় ডান পাশ হয়ে ঘুমালে কি হয়?
- গর্ভাবস্থায় উপর দিকে মুখ করে ঘুমালে কি হয়?
- গর্ভাবস্থায় নিচের দিকে মুখ করে ঘুমালে কি হয়?
- গর্ভাবস্থায় কিভাবে ঘুমানো উচিৎ
- শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
ভূমিকাঃগর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় এটা আমাদের অনেকেরই অজানা। আমরা লক্ষ্য করলে
দেখতে পাই অনেক মানুষ আছে যারা গর্ভবতী মহিলাকে ডান পাশ হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেয়
আবার অনেক মানুষ আছে যারা বাম পাশ হয়ে ঘুমানোর পরামর্শ দেয়। কিন্তু কোন পাস হয়ে
ঘুমালে সব থেকে ভালো হয়? এটা তো জানা দরকার তাই না?
আরো পড়ুনঃ
চুলের যত্নে কারি পাতার ব্যবহার
একজন গর্ভবতী মা প্রথম এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে ডান বা বাম পাশ হয়ে ঘুমাতে
পারে। এতে কোনো সমস্যা হয় না কিন্তু তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে একজন গর্ববতী মায়ের
অবশ্যই বাম পাশ হয়ে ঘুমানো উচিত। কারণ সেই সময় মায়ের গর্ভের সন্তান বড় হতে থাকে
এবং বাচ্চার অবস্থানও পরিবর্তন হতে থাকে। তাই একটু নিয়ম করে ঘুমানো উচিৎ।
গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার কারণ কি?
গর্ভাবস্থায় ঘুম না হওয়ার কারণ হলো সেই সময় একজন গর্ভবতী মায়ের গর্ভের সন্তান বড়
হতে থাকে সেই জন্য মায়ের মুত্রথলীতে চাপ পড়তে থাকে আর তখনই অর্থাৎ একটু পর পর
প্রসাব এর চাপ আসতে থাকে। এই জন্য মায়ের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে। আবার অনেক সময়
মায়েদের একটু পর পর বমির ভাব দেখা দেয় তখন অনেকটা মাথা ঘোরে, মাথা ব্যাথা করে তখন
ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
আবার অনেক মায়েরা আছে যারা ডান পাশ হয়ে বেশি ঘুমায় যার ফলে তাদের পা ও পিঠ ব্যথা
করে তখন ঘুম হয় না। আবার ত্রৈমাসিক সময়ে মায়ের গর্ভের সন্তান ধীরে ধীরে বড় হতে
থাকে সেই জন্য মায়েদের হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে যায় ফলে তাদের বুক ধড়পড় করে। এছাড়াও
অনেক মায়ের কোষ্ঠকাঠিন্ন রোগ হয়ে থাকে এজন্য পেটে সামান্য ব্যথা অনুভব করে। এগুলো
কারণেই মূলত একজন মায়ের রাত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হয় না।
গর্ভবস্থায় ঘুম না হলে কি করতে হবে?
গর্ভাবস্থায় ঘুম না হলে কি করতে হবে এটা সকল মায়েদেরই জানানো প্রয়োজন। গর্ভকালীন
সময়ে বাচ্চা বড় হতে থাকে যার জন্য মায়েদের অনেক অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাফেরা করতে
হয়। আবার যারা গ্রামে থাকে শহরে একা থাকে, দেখাশুনা করার মতো কেউ থাকে না তাদেরকে
বাড়ির কাজও করতে হয়। অর্থাৎ অনেক পরিশ্রম করতে হয় এজন্য সকল গর্ভবতী মায়েদের
পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের প্রয়োজন হয়।
আর এই ঘুম যদি না হয় তাহলে আপনাকে প্রথমে একটি সময়সূচি তৈরি করে নিতে হবে যে আপনি
প্রতিদিন কখন কখন ঘুমাবেন এবং কত ঘন্টা ঘুমাবেন। সেই অনুযায়ী আপনাকে প্রতিদিন
ঘুমাতে হবে। প্রয়োজনে আপনাকে দিনের সময়েও একটু সময় নিয়ে ঘুমাতে হবে। আপনি যদি না
ঘুমান তাহলে আপনার মধ্যে ক্লান্তি ভাব থেকে যাবে তখন কোনো কাজ করতে ইচ্ছা করবে না
তাই ঘুম খুবই দরকার। প্রয়োজনে আপনি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে একটু ব্যয়াম করে নিবেন
এতে আপনার শরীর ক্লান্ত হবে এবং ঘুম ভালো হবে।
গর্ভাবস্থায় ভালো ঘুমের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন
গর্ভাবস্থায় ভালো ঘুমের জন্য অবশ্যই আপনাকে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করতে হবে তা না
হলে আপনি যখনই ঘুমাতে যাবেন তখনই আপনার সমস্যা হতে থাকবে। এখন গর্ভাবস্থায় ভালো
ঘুমের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন সে সম্পর্কে আপনাকে জানাব। গর্ভাবস্থায়
আপনাকে প্রথম থেকেই আপনার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।
প্রয়োজনে আপনাকে কয়েক মাস পর পর ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে তাহলে আপনি
সম্পূর্ণ বিপদমুক্ত থাকতে পারবেন। একজন গর্ভবতী মায়ের ঘুমের উপযুক্ত সময় হলো
রাত্রে। রাত্রে যদি ভালো ঘুম না দিতে পারে তাহলে তার সারাটা দিন অলসতায় কেটে
যাবে। কাজ করার কোনো শক্তি বা আগ্রহ থাকবে না। সে জন্য রাত্রে ঘুমানোর চেষ্টা
করতে হবে।
- রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে আপনি যদি পারেন একটু সময় নিয়ে শরীর চর্চা করুন তাহলে আপনার শরীরে একটু ক্লান্তি ভাব আসবে যেটা আপনাকে ঘুমাতে সাহায্য করবে।
- আপনার ঘরের লাইট এবং সমস্ত বাতি বন্ধ করে দিন তাহলে আপনি কিছু দেখতে পাবেন না এবং আপনার ঘুমানোতে কোনো সমস্যা হবে না। আর আপনার যদি বাতি বন্ধ করতে সমস্যা হয় তাহলে আপনি চোখে কোনো কাপড় দিয়ে রাখতে পারেন।
- আপনার কাছে কোনো মোবাইল ফোন অর্থাৎ ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস রাখা যাবে না। কারণ আপনি যদি আপনার কাছে মোবাইল ফোন রাখেন তাহলে আপনি একটু পর পর সেটি ব্যবহার করতে চাইবেন বা আপনার মনে ইচ্ছা জাগবে। সেজন্য দূরে রাখতে হবে।
- একটি সময়সূচি তৈরি করুন যেটা ফলো করে আপনি ঘুমাবেন।
- ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই চেষ্টা করবেন একটু শারীরিক ব্যয়াম করার।
- দিনের বেলায় একটু পর পর হালকা করে খাবার খাবেন। কিন্তু ঘুমানোর ঠিক ৩ ঘন্টা পূর্বে খাওয়া বাদ দিবেন।
- বিকেল বেলায় চা ও কফি খাওয়া থেকে দূরে থাকবেন।
- ভালো ঘুমের জন্য চাইলে আপনি বালিস ব্যবহার করতে পারেন। এতে করে আপনার শরীরে একটু আরামবোধ হবে।
- গর্ভকালীন সময়ে আপনি চেষ্টা করবেন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে।
গর্ভাবস্থায় ডান পাশ হয়ে ঘুমালে কি হয়?
গর্ভাবস্থায় ডান পাশ হয়ে ঘুমালে কি হয় এটা আমার আপনার সকলের জানা জরুরী। কারণ
আপনি গর্ভকালীন সময়ে যদি ইচ্ছা মতো ঘুমাতে চান তাহলে আপনার সহ আপনার গর্ভের
সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। সেজন্য আপনার জানা উচিৎ যে ডান পাশে ঘুমালে আপনার কি
হবে। আপনি প্রথম দিকে অর্থাৎ আপনার প্রথম এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে আপনি চাইলে
ডান পাশ হয়ে ঘুমাতে পারেন কিন্তু তৃতীয় ত্রৈমাসিক সময়ে আপনাকে ঘুমের অবস্থান
পরিবর্তন করতে হবে।
আরো পড়ুনঃভাতের মাড় খাওয়ার নিয়ম
কারণ সেই সময় আপনার গর্ভের সন্তান বড় হতে থাকবে এবং আপনার পেট বড় হতে থাকবে সেই
সময় যদি আপনি ডান পাশ কাত হয়ে ঘুমান তাহলে আপনার পিঠে ও পায়ে ব্যথা হবে। অনেক সময়
পা ফুলে যেতে পারে। সেই সাথে আপনার ভেতরে অক্সিজেনের অভাব হবে যার ফলে আপনার
গর্ভের সন্তান শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। সেই জন্য প্রথম অবস্থায় ডান পাশ হয়ে ঘুমালেও
পরে আপনাকে ঘুমানোর পজিশন পরিবর্তন করতে হবে।
গর্ভাবস্থায় উপর দিকে মুখ করে ঘুমালে কি হয়?
গর্ভাবস্থায় উপরের দিকে মুখ করে ঘুমালে আপনার সন্তানের শ্বাস নিতে কষ্ট হবে। সেই
সাথে আপনার বাচ্চার নড়াচড়া আগের থেকে কমে যাবে। এজন্য নিজের কষ্ট হলেও চেষ্টা
করবেন গর্ভাবস্থায় উপর দিকে মুখ করে না ঘুমানোর। উপর করে ঘুমানো মানে আমরা চিত
হয়ে ঘুমানোকে বোঝাচ্ছি।
চিত হয়ে ঘুমালে অনেক সময় আপনারও শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে। এবং মাঝে মাঝে আপনার
হার্ডবিড আগের তুলনায় একটু বেশিই পাম্প করবে তখন আপনি আপনার মধ্যে একটু অস্থিরতা
অনুভব করবেন। এজন্য গর্ভাস্থায় উপর দিকে মুখ করে ঘুমানো থেকে বিরত থাকুন।
গর্ভাবস্থায় নিচের দিকে মুখ করে ঘুমালে কি হয়?
গর্ভাবস্থায় নিচের দিকে মুখ করে ঘুমালেও আপনার এবং আপনার সন্তানের ক্ষতি হতে
পারে। গর্ভাবস্থায় নিচের দিকে মুখ করে ঘুমালে আপনার পেটে চাপ পড়বে। ফলে আপনার
গর্ভের সন্তানের নড়াচড়া করতে অনেক কষ্ট হবে। প্রথম দিকে আপনি পেট নিচের দিকে করে
ঘুমাতে পারবেন কিন্তু পরবর্তীতে আপনি পেট নিচে করে ঘুমাতে পারবেন না কারণ
তখন আপনার পেট আগের তুলনায় অনেক বড় হবে। সেই সময় পেট নিচের দিকে করে ঘুমালে আপনার
এবং আপনার সন্তান উভয়েরই অনেক অসুবিধা হতে পারে। সেই জন্য বিশেষ করে তৃতীয়
ত্রৈমাসিক চলাকালীন সময়ে নিচের দিকে মুখ করে ঘুমানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থায় কিভাবে ঘুমানো উচিৎ
গর্ভাবস্থায় কিভাবে ঘুমানো উচিৎ সে সম্পর্কে জানা খুবই জরুরী। কারণ এটি না জানলে
আপনি এবং আপনার সন্তান অনেক সমস্যায় পড়তে পারেন। গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের কাছে গেলে
ডাক্তারগণ বলেন যে সব সময় বাম পাশ হয়ে ঘুমাতে হবে। বাম পাশ হয়ে ঘুমালে আপনার
শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পাবে এবং আপনার সন্তানও ভালোমতো শ্বাস নিতে পারবে।
আরো পড়ুনঃ
তবে আপনি যদি এক পাশে হয়ে ঘুমাতে বেশি সমস্যা হয় তাহলে কিছু সময়ের জন্য আপনি
আপনার ঘুমের পজিশন পরিবর্তন করতে পারেন। তবে বেশিক্ষণ ডান পাশে হয়ে ঘুমানো ঠিক
না। ডান পাশে বেশিক্ষণ ঘুমালে আপনার পা ব্যথা ও পিঠ ব্যাথা হতে পারে। সেজন্য
গর্ভাবস্থায় বাম পাশে ঘুমানো সবথেকে ভালো পজিশন।
শেষ কথাঃ গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয়
গর্ভাবস্থায় ডান পাশে ঘুমালে কি হয় তা আশা করি জানতে পেরেছেন। গর্ভাবস্থায় আপনি
যদি ডান পাশে ঘুমান তাহলে আপনার সন্তানের ক্ষতি হতে পারে। সেই সাথে আপনারও পায়ে ও
পিঠে ব্যাথা হতে পারে। এই জন্য ডান পাশে না ঘুমিয়ে বাম পাশে ঘুমানোর চেষ্টা করবেন
তাহলে আপনার এবং আপনার সন্তান দুজনের জন্যই তা ভালো হবে।
অনেক ধৈর্য ধরে আমাদের ওয়েবসাইটে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও
কৃতজ্ঞতা জানাই। এরকম আরো নতুন নতুন আপডেট তথ্য পেতে আমাদের এই পিএম ড্রিম আইটি
ওয়েবসাইটটি ফলো করে রাখতে পারেন। আবারো আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে আজকের মতো
বিদায় নিচ্ছি।
পি এম ড্রিম আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url